কীভাবে বেডরুমে একটু নতুনত্ব আনবেন তা নিয়ে ভাবছেন? হয়তো আপনার রুমের স্পেস এবং আসবাব দুটোই বেশ ভালো কিন্তু একটু কি খাপছাড়া মনে হচ্ছে? মাঝে মাঝে রুমের ছোটখাট কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে আপনার ইন্টেরিওরে আসতে পারে আমূল পরিবর্তন আর সেই সাথে ঘরের এই পরিবর্তন দারুণ প্রভাব ফেলতে পারে আপনার জীবনে। কিন্ত রুমের এই পরিবর্তনের ক্ষেত্রে যেটি একটি বড় বিষয় হয়ে দাঁড়ায় তা হচ্ছে, বাজেট।
বাজেটের মধ্যে ঘরকে আকর্ষণীয় করে তুলতে হলে দরকার কিছু পরিকল্পনার। এই ব্লগে আজকে আমরা জানবো, কীভাবে বাজেট ফ্রেন্ডলি উপায়ে সাজিয়ে ফেলতে পারেন আপনার বেডরুমটিকে।
অ্যাাকসেন্ট ওয়াল
অ্যাকসেন্ট ওয়াল বা ফিচার ওয়াল বলতে ঘরের এমন দেয়ালকে বোঝায়, যা অন্যান্য দেয়াল থেকে একটু ব্যতিক্রম হবে। দেয়ালের রঙ, কালার কনট্রাস্ট কিংবা ম্যাটিরিয়াল হতে পারে অন্যান্য দেয়াল থেকে আলাদা। অ্যাকসেন্ট দেয়াল সাজানোর কিছু উপায় নিয়ে এখন বলা যাক।
১. পেইন্ট বা রঙ করা
ঘরের এই বিশেষ দেয়ালটিকে আলাদা একটি রঙে রাঙিয়ে, করে তুলতে পারেন আরও আকর্ষণীয়। রঙ করার বিশেষ একটি সুবিধা হলো, আপনার যদি রঙটি কিছুদিন পর ভালো না লাগে তাহলে সহজেই এর ওপর দিয়ে আবার রঙ করে ফেলতে পারবেন। রিপেইন্টিং বা পুনরায় রঙ করার বিষয়টি কিছুটা সময়সাপেক্ষ হলেও ঘরকে নতুন একটি লুক দেওয়ার ক্ষেত্রে এটি খুবই বাজেট ফ্রেন্ডলি একটি উপায়।
২. ওয়ালপেপার
আপনি আপনার নিজের পছন্দ কিংবা অভিব্যক্তিকে খুব সাবলীল ভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারেন রুমের দেয়ালে ওয়ালপেপার দিয়ে। পেইন্টিং থেকে এর খরচ কিছুটা বেশি হলেও এটি বেশি টেকসই হয়ে থাকে। যদি পেইন্টিং এবং ওয়ালপেপার দুটোই আপনার ভালো লেগে থাকে এবং একসাথে দুটোর সৌন্দর্যই দেয়ালে পেতে চান, তাহলে সেক্ষেত্রে পেইন্টেবল ওয়ালপেপার আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো একটি উপায়।
৩. আর্টওয়ার্ক
সুন্দর কোনো আর্টওয়ার্ক কিংবা শিল্পকর্ম আপনার দেয়ালের সৌন্দর্য অনেক গুণ বাড়িয়ে দিতে পারে। যদি বিশেষ আর্টওয়ার্ক কেনা আপনার জন্য দাম সাপেক্ষ হয়ে থাকে তবে আপনার কাছে থাকা ছবির কালেকশন দিয়েই সাজিয়ে তুলতে পারেন আপনার দেয়ালটি। যদি আপনার কোনো আর্টিস্ট ফ্রেন্ড থেকে থাকে তবে মুরাল দিয়ে সাজিয়ে নিতে পারেন কাঙ্ক্ষিত দেয়ালটিকে।
৪. শিপল্যাপ
রুমকে আকর্ষণীয় করে তুলতে শিপল্যাপ একটি দারুণ সাশ্রয়ী উপায়। আর এজন্য আপনার কিছু জিনিস দরকার পড়বে আর এই কাজে তুলনামূলক বেশি পরিশ্রম হলেও সঠিকভাবে কাজটি করতে পারলে রুমের ইন্টেরিওর এনে দিবে মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য। শিপল্যাপের মতোই আরেকটি বাজেট ফেন্ডলি উপায় হচ্ছে, শার্পি শিপল্যাপ।
সঠিক আলোকসজ্জার ব্যবহার
রুমে সঠিক লাইটিং এর ব্যবহার আপনার রুমকে করে তুলতে পারে আরও আকর্ষণীয় এবং এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রভাব ফেলে।
১. সাধারণ লাইটিং
যদি আপনি রুমে ফ্লোরাসেন্ট বাতির ব্যবহার করে থাকেন, সেক্ষেত্রে আমাদের পরামর্শ হচ্ছে, ফ্লোরাসেন্ট বাতির পরিবর্তে ওয়ার্ম রিসেসড সিলিং লাইট ব্যবহার করার। মার্কেটে আপনার চাহিদা অনুযায়ী বাজেট ফ্রেন্ডলি অনেক ধরনের লাইট পেয়ে যাবেন। আর এই লাইটের ব্যবহার আপনার ঘরের পরিবেশকে করে তুলবে আরও সুন্দর।
২. অ্যামবিয়েন্ট লাইটিং
রুমের দেয়ালকে সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য দেয়ালে সাথে লাইটের ব্যবহার করতে পারেন। জার লাইট কিংবা এল ই ডি স্ট্রিং লাইটের ব্যবহার আপনার দেয়ালকে যেমন সুন্দর করে তুলবে তেমনি সারাদিনের ব্যস্ততার শেষে আপনি ঘরে ফিরে পাবেন শান্তির এক পরশ। ঘরে আলোক বাতির যথযথ ব্যবহার আপনার রুমের আবহ পরিবর্তনে যথেষ্ট।
৩. এক্সেসরিসের ব্যবহার
শোবার ঘরের জন্য বেড অর্থাৎ খাট একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার, যা ঘরকে দিতে পারে নতুন এক আমেজ। আর একে নতুন ভাবে সাজানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে সাশ্রয়ী জিনিস হচ্ছে, চাদর এবং বালিশের কভারের নতুনত্ব আনা। নিজের পছন্দের কুশন দিয়ে আপনি সাজিয়ে নিতে পারেন আপনার মনের মতো রাজ্য।
সঠিক পরিমাপের হেড বোর্ডের ব্যবহার বেডরুমের জন্য এক অনন্য ভূমিকা পালন করে। সেই সাথে দেয়াল এবং ফ্লোরের সাথে মানানসই পর্দা আপনার রুমকে করবে আরও আকর্ষণীয়। এছাড়া রুমে রাখতে পারেন একসাথে কয়েকটি কাজে ব্যবহার করা যায় এমন আসবাব অর্থাৎ মাল্টি ফাংশনাল আসবাব। যেমন- ড্রয়ার যুক্ত পাশ টেবিল এবং কিছু রাখার মতো জায়গা যুক্ত অটোম্যান বা মোড়া। টেবিল ল্যাম্প কিংবা ইনডোর প্ল্যান্ট রাখতে পারেন ঘরকে সাজানোর ক্ষেত্রে, আর জিনিসগুলো তেমন জায়গাও দখল করেনা রুমে।
আয়নার ব্যবহার
রুমকে বড় দেখাতে আয়নার ব্যবহারের জুড়ি নেই। যদি আপনার জায়গার স্বল্পতা থাকে সেক্ষেত্রে আপনি ড্রেসিং টেবিলের বদলে মিরর ক্লোসেট অর্থাৎ আয়নাযুক্ত আসবাব ব্যবহার করতে পারেন। এটি আপনার রুমকে আরও বড় দেখাতে সাহায্য করবে। রুম ছোট হোক কিংবা বড়, দেয়াল আয়না আপনার রুমের জন্য নিঃসন্দেহে একটি অসাধারণ সংযোজন।
ফ্লোরিং এ পরিবর্তন আনা
রুমে কার্পেটের ব্যবহার রুমে সৌন্দর্যে বিরাট একটি ভমিকা পালন করে। নন-স্লিপ কার্পেট ঘরের ব্যবহারের জন্য খুবই উপযুক্ত, আপনি চাইলে ডাবল সাইডেড কার্পেট টেপ ব্যবহার করতে পারেন, এটি একটি দরকারি এবং বাজেট সাশ্রয়ী উপায়। বিছানার সাথে লাগোয়া কার্পেট হতে পারে আপনার রুমের জন্য চমৎকার সংযোজন, ঘুম থেকে উঠে এতে পা রাখে পেতে পারেন দারুণ অনুভূতি।
আপনার রুমের দেয়ালটিকে রঙ করতে হবে আপনার আসবাব এবং কার্পেটের কথা মাথায় রেখে। আপনার রুমের আদলকে আকর্ষণীয় করতে তুলতে বিরাট প্রভাব ফেলে কাপেট এবং পর্দা।
সামঞ্জস্য বজায় রাখা
আপনি আপনার বেডরুমকে ট্রেডিশনাল কিংবা ভিক্টোরিয়ান যে স্টাইলেই সাজান না কেন, রুমের আসবাবে সামঞ্জস্য বজায় রাখা খুবই জরুরি। এর মানে হচ্ছে, রুমের পরিমাপের সাথে সামঞ্জস্য রেখে আসবাব সহ যাবতীয় জিনিস রাখা। আর এর জন্য আপনাকে কোনো টাকাই খরচ করতে হবেনা।
সাধারণ কিছু জিনিস দিয়েই আপনি এই পরিবর্তনগুলো আনতে পারবেন। আপনার বেডটিকে মাঝে এনে তার দুপাশে সাইড টেবিল রাখতে পারেন। আর টেবিলগুলোর একটিতে ফুলাদানি কিংবা টেবিল ল্যাম্প, আর আরেকটিতে ফটো ফ্রেম রাখতে পারেন। যা আপনার রুমকে দিবে ছিমছাম কিন্তু অসাধারণ সৌন্দর্য।
এখন তো জেনেই নিলেন, ঘরকে নতুনভাবে সাজিয়ে তুলতে ব্যাংক ভাঙ্গার আর দরকার হয়না। আপনার ইচ্ছা এবং সময়কে কাজিয়ে লাগিয়েই ঘরকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে পারেন।
আপনার বাসা কিংবা অফিসের জন্য প্রফেশনাল ইন্টেরিয়র ডিজাইনার পেতে যোগাযোগ করতে পারেন– Sheraspace এ। আর আপনার যদি ইন্টেরিওর প্রোজেক্টে ইনভেস্ট করার বদলে শুধুমাত্র প্রফেশনালদের পরামর্শের দরকার পড়ে, তবে আমাদের অনলাইন ইন্টেরিওর ডিজাইন কন্সাল্টেশন তো আছেই।
এই ব্লগটি English এ পড়ুন।
অনুবাদ: জান্নাতুল তাজরিয়া ফার্সি
No Comments