প্রাকৃতিক আলো আমাদের মেজাজ ও ভালো থাকার উপলব্ধির ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে সক্ষম। প্রাকৃতিক আলো চোখের আরাম বাড়িয়ে দেয় এবং বাড়িতে স্নিগ্ধ পরিবেশ সৃষ্টি করে।
দিনের আলোতে যেমন কর্মক্ষমতা বাড়ে, তেমনি মানসিক চাপও কমে যায়। এমনকি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।
অবশ্য, অন্ধকার ঘরে প্রাকৃতিক আলো নিয়ে আসা একটু কঠিন। তাই বলে সব জায়গায় জানালা তৈরি করার মত অতিরিক্ত কোন উপায় আপনাকে অবলম্বন করতে হবেনা। ছোট ছোট কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমেই ঘরে প্রাকৃতিক আলোর প্রকাশ বাড়িয়ে তোলা যায়।
১। সঠিক রঙ বাছাই
শুরুটা হোক রঙ দিয়ে! ঘরে দিনের আলোর প্রকাশ বাড়িয়ে তোলার জন্য সঠিক কালার প্যালেট পছন্দ করা অপরিহার্য। এই যেমন হাল্কা রঙ একটা স্পেসকে আলোকজ্জল করে তুলতে সাহায্য করে। গাঢ় রঙ ঘরে আলো ছড়াতে বাঁধা সৃষ্টি করে। অন্যদিকে সাদা রঙের নরম শেড ব্যাবহারে সেই একই জায়গা আরো আলো ঝলমলে মনে হবে। অবশ্য সাদার সবচেয়ে শুভ্র শেড ব্যাবহার করলে ঘরের ভেতরে একরকম হিম শীতল বাতাবরণ তৈরি হতে পারে। তার পরিবর্তে অফ-হোয়াইট শেড অথবা ডিমের আবরণের মত রঙ ব্যাবহার করলে অনেকটাই উষ্ণ পরিবেশ তৈরি হয়। অফ হোয়াইট ছাড়াও আরও যেসব রঙ আপনার ঘরকে রৌদ্র ঝলমলে করতে পারে তার মধ্যে আছে উজ্জ্বল হলুদ, প্যাস্টেল, উষ্ণ হলদে-বাদামী, ও হাল্কা ধূসর।
ঘরকে আরো লম্বা ও বড় দেখানোর একটা কৌশল হচ্ছে সিলিং-টাকে দেয়ালের চাইতে দুই-এক শেড হাল্কা রঙে রাঙানো। আরেকটা কৌশল হচ্ছে এমন রঙ ব্যাবহার করা যা মখমলি বা স্যাটিন ধরণের। এতে আলোর যথেষ্ট প্রতিফলন হয় ও আয়নার মত প্রভাব সৃষ্টি হয়। এমনটা ম্যাট-ফিনিশ রঙ দিয়ে করা যায়না।
২। মেঝে
যেসব মাধ্যম প্রাকৃতিক আলোর বিকাশ ঘটায়, তার মধ্যে মেঝে বা ফ্লোরিং অন্যতম। কারণ, যদি সঠিক উপাদান আর রঙ বেঁছে নেয়া যায় তবে মেঝেকে আলো-বান্ধব প্রতিফলকে পরিণত করা যায়। ফ্লোরিং এর জন্য সুবিধাজনক অপশন হচ্ছে উষ্ণ রঙের কাঠ, পলিশ ফিনিশের সিরামিক অথবা পাথর। ঘরের অভিব্যক্তি বাড়িয়ে তুলতে আপনি যদি কার্পেটের ব্যাবহার পছন্দ করেন তবে হাল্কা রঙের রাগস নিন। এটি ছোট জায়গার বাতাবরনকে আলোকজ্জল করে। এবং গাঁড় রঙের মেঝেওয়ালা ঘরের জন্য এটি সবচেয়ে বেশি উপযোগী।
৩। কাঁচ ও আয়নার ব্যাবহার
ইন্ডোর লাইটিং এর গুনগত মান বাড়াতে কাঁচ নানাভাবে ব্যাবহার করা যায়। প্রথমত, সঠিকভাবে স্থাপন করতে পারলে আয়না দিয়েই একটি স্পেসকে অভূতপুর্বভাবে আলোকিত করা যায়। প্রাকৃতিক আলোর বিকাশ কয়েকগুণ বাড়িয়ে তুলতে লম্বা ফুল-লেন্থ আয়না সবচেয়ে উপোযগী পছন্দ। তাছাড়াও বুদ্ধি করে হলওয়ের বিভিন্ন জায়গায় আয়না লাগালে অন্ধকার ঘরে আলোর প্রতিফলন হয় ও এতে করে ঘরকে আরো বড় দেখায়।
আরেকটা টোটকা হচ্ছে যেসব দেয়াল বাড়ির মূল স্থাপত্যের অংশ নয়, সেসব দেয়ালের কিছু কিছু অংশ সরিয়ে সেখানে কাঁচের ব্লক বসিয়ে দেয়া। এতে যেখানে কোন আলোই ঢুকতো না, সেখানে যথেষ্ট পরিমাণ দিনের আলো আসবে। স্কাইলাইট বসানোও একটা ভালো বুদ্ধি, কারণ এটি মেঘ থেকে প্রতিফলিত হওয়া আরামদায়ক হাল্কা সূর্যের আলো বয়ে নিয়ে আসবে। ঘরে আয়না ব্যাবহার করার আরো নানা উপায় জানতে পড়ুন, গৃহসজ্জায় কিভাবে আয়না ব্যাবহার করা যায়। (গৃহ সজ্জায় আয়নার ব্যবহার)
৪। জানালা
ঘরের অভ্যন্তরে দিনের আলো বাড়িয়ে তোলার খুব সাধারণ অথচ কার্যকরী উপায় হচ্ছে মেঝে পর্যন্ত লম্বা জানালা ও দরজা লাগানো। বিশেষ করে দুই দিকে ভাঁজ হয় এমন দরজাগুলো হতে পারে সঠিক পছন্দ, কারণ এগুলো পুরো একটা দেয়ালকে কাঁচে পরিণত করে। এতে যেমন মনোমুগ্ধকর ভিউ পাওয়া যায় তেমনি পর্যাপ্ত পরিমাণ আলো আসে। সম্ভব হলে জানালায় ভারি পর্দা দেয়া থেকে বিরত থাকুন- এতে স্পেস আরো আলোকিত হবে। অবশ্য যদি এতে চোখ ঝলসে ওঠে তবে সুতির সাদা পর্দা হতে পারে আপনার জন্য নিস্তারের উপায়। কারণ এগুলো একেবারেই আলো শুষে নেয় না। যদি বেশ উপর থেকে টানানো যায়, তবে এগুলো একটা জানালাকে দেখতে আরো লম্বা ও প্রশস্ত করে।
৫। হাল্কা রঙের আসবাব
ঘরে বেশি বেশি আলো নিয়ে আসার একটি সুনিপুণ পদ্ধতি হলো হাল্কা রঙের আসবাব বেঁছে নেয়া, কারণ এগুলো ঘরে একটা উজ্জলতার ছাপ নিয়ে আসে। এটি একটি বদ্ধ ঘরকে বড় ও বাতাস খেলে এমন একটি জায়গায় পরিণত করতে পারে। আসবাবগুলোকে এমনভাবে রাখার চেষ্টা করুন যেন আলো সরাসরি সেখানে গিয়ে পরে। এতে ঘর আরো আলোকিত হয়ে যাবে, বিশেষ করে আসবাবের জমিন যদি চকচকে ধরণের হয়।
অন্যদিকে ঘরের অন্দরকে হালকা, ফুরুফুরে ও বাতাসের অবাধ চলাচলের উপযোগী করে তোলার মূলমন্ত্র হচ্ছে মিনিমালিস্টিক থাকা। শুধুমাত্র ঘরের সাজসজ্জার পরিমাণকে কমিয়ে নিয়ে আসতে পারলেই একটি অন্ধকার ঘরকে সাথে সাথেই আলোকিত করে তোলা যায়। এক্সেন্ট ফার্নিচারের পরিমাণ কমিয়ে দেয়া, দেয়ালগুলো যতটা সম্ভব ফাঁকা রাখা, এবং শুধু প্রয়োজনীয় জিনিস রাখা হচ্ছে মিনিমালিজমের কিছু ভালো উপায়।
৬/ আনুষঙ্গিক উপকরণের গুরুত্ব
গৃহ সজ্জায় আনুষঙ্গিক উপকরণ বেঁছে নেয়ার ব্যাপারটা প্রথম প্রথম খুব সামান্য ব্যাপার মনে হতে পারে, তবে শেষে গিয়ে এগুলোই অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। উদাহরণ স্বরূপ, অনাড়ম্বর ঝাড়বাতি যেমন ফ্লাশড অথবা সেমি-ফ্লাশড মাউন্ট, মাথার উপরের লাই্টিং, রিসেসড লাইটিং, একটি ঘরকে সমানভাবে আলোকিত করতে পারে। এই ধরণের লাইটিং ছায়াময় স্পেসকে আলোকিত করার দুর্দান্ত উপায়। তাছাড়াও চকচকে ও মসৃণ উপকরণ, যেমন ধাতব, গ্লাস, অথবা আয়নাযুক্ত টপ ইত্যাদি প্রাকৃতিক আলোকে ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করে।
৭। গাছগাছালি ছেঁটে দিন
গাছপালা জানালার ওপারে বেড়ে উঠলে ঘরে আলো ঢোকার রাস্তা অনেকাংশে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যদিও গাছ-গাছালি খুব সামান্য ব্যাপার মনে হতে পারে, অন্দরে আলোর মাত্রার ওপর এর প্রভাব অবহেলা করার মত নয়। সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ না হলে এই একটি কারণই সমস্ত চিত্র পাল্টে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। তাই বাইরের বাগানের রক্ষণাবেক্ষণ খুবই জরুরি। দরজা ও জানালায় অতিরিক্ত ছায়া যেন না পরে, সেজন্য গাছ-ঝাড়, গাছের বাড়ন্ত অংশ প্রয়োজন অনুযায়ী ছেঁটে নিন।
যেকোনো ইন্টেরিওর স্পেসের জন্য যথেষ্ট প্রাকৃতিক আলো থাকা খুব জরুরি। এতে মননশীলতা যেমনি বাড়ে, তেমনি শারীরিক সুস্থতাও বৃদ্ধি পায়। কিছু ছোট ছোট পন্থা অবলম্বন করে একটি অন্ধকারময় ঘরকে সহজেই আলো ঝলমলে ও প্রাণবন্ত করে তোলা যায়।
প্রফেশনাল ইন্টেরিওর ডিজাইন সহযোগীতা পেতে অথবা অনলাইনে ইন্টেরিওর ডিজাইন পরামর্শের জন্য, আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন Sheraspace এ!
এই ব্লগটি English এ পড়ুন।
অনুবাদ: ডাঃ অধরা মাধুরী ওয়াদুদ
No Comments