Home Tips

লকডাউনে পবিত্র রমজান পালন হোক বাড়িতে বসে

April 11, 2021 | By

রমজান মাস মুসলিম বিশ্বের জন্য পবিত্র এবং ধর্মীয় তাৎপর্যপূর্ণ একটি মাস। করোনাকালীন পরিস্থিতি অনুযায়ী, এবারও আমরা একত্রিত হয়ে সকলে মিলে রমজান মাসটিকে আনন্দময় করে তুলতে না পারলেও, আমরা আমাদের সাধ্যের মধ্যে সবটুকু চেষ্টা করতে পারি।

মহামারীকালীন এই সময়ে আমাদের উচিত বাড়িতে নিরাপদ থাকা। আর এ রমজানে প্রতিবারের মতো এবারও পাড়া-প্রতিবেশি, সব আত্মীয়স্বজন মিলে ইফতার আয়োজন করতে পারবো না। এই বিষয়গুলো আমাদের কাছে হতাশাজনক মনে হলেও এমনটি ভাবার কারণ নেই যে, লকডাউনে বাড়িতে বসে রোজার আনন্দ থেকে বঞ্চিত থাকতে হবে। তাই আজকে এই ব্লগে বলবো এমন কিছু উপায়, যার মাধ্যমে ঘরে বসেই উপভোগ করতে পারেন পবিত্র রমজানের পরিপূর্ণ আনন্দ।  

Image: swoonworthy.co.uk

ব্যক্তিগত জ্ঞানার্জন

রমজান ব্যক্তিগত ইসলামী জ্ঞানার্জনের উপযুক্ত সময়। তাই কুরআন, তাফসীর, হাদীস সংকলনভিত্তিক কিছু বই কিনে ফেলুন, প্রয়োজনে ধার নিন বা স্মার্টফোনে কুরআন হাদীস ও ইসলামী সাহিত্যের অ্যাপগুলি ইন্সটল করে নিতে পারেন।

নামাজের জন্য নির্দিষ্ট একটি জায়গা নির্ধারণ করুন

পবিত্র রমজান মাসের প্রধান একটি বিষয় হচ্ছে- প্রার্থণা করা। পবিত্র এই মাসে আমরা সাধারণত আমাদের পরিবারের সদস্য এবং প্রতিবেশীদের সাথে মসজিদে যাওয়ার চেষ্টা করি। আমরা আমাদের ঘনিষ্ঠজনদের সাথে দেখা করি এবং তারাবীহ নামাজের সময় সকলে একসাথে জড়ো হই। আর এর মধ্যে দিয়েই আমাদের মাঝে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে।  কিন্তু ঘরে বসে পবিত্র রমজান পালন মানেই যে এই বন্ধন বা ঘনিষ্ঠতা হারিয়ে যাবে এমনটি কিন্তু নয়। আমরা আমাদের বাড়িতেই নামাজের জন্য নির্দিষ্ট একটি স্থান নির্ধারণ করতে পারি। ঘরের লিভিং স্পেস কিংবা খোলা জায়গা হতে পারে নামাজ ও অন্যান্য ইবাদাতের জন্য আদর্শ একটি জায়গা। বাড়ির সকলের সাথে সালাত আদায়ের মাধ্যমে সবার মাঝে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্কের তৈরি হবে। এক্ষেত্রে ঘরের আসাবাবপত্র যেমন- সেন্টার টেবিল কিংবা চেয়ার সরিয়ে রাখুন এবং মেঝেতে কার্পেটের ব্যবহার করুন। কার্পেটের বদলে জায়নামাজ বা প্রেয়ার ম্যাটের ব্যবহার করতে পারেন। আর এরই সাথে ধর্মীয় বই এবং মিসবাহ বা তসবীহ টেবিলে রাখতে পারেন। আর এভাবে সহজেই পবিত্র এই মাসে বাড়িতেই আপনি সালাত আদায়ের জন্য বিশেষ একটি জায়গা গুছিয়ে নিতে পারেন।

Image: casanesia.com

শান্তিপূর্ণ একটি আবহ বা পরিবেশের সৃষ্টি

যেহেতু আমরা আজকাল বাড়িতেই থাকছি তাই এমন একটি পরিবেশ তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ,  যা আমাদেরকে মানসিক প্রশান্তি দিবে। এজন্য ঘরকে সুন্দর এবং আকর্ষণীয় করতে তুলতে ব্যবহার করতে পারি  টার্কিশ বাতি,  হালকা সুগন্ধি মোমবাতি। এগুলো ব্যবহারে আমাদের বাড়িতে তৈরি হতে পারে শান্তিপূর্ণ একটি পরিবেশ। ওয়ার্ম লাইটিং এবং বিভিন্ন আনুষাঙ্গিক যেমন- ইনডোর প্ল্যান্ট আমাদের ঘরের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিতে পারে বহুগুণে। পবিত্র এই মাসে আমরা আমাদের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে সিয়াম পালন এবং প্রার্থনার চেষ্টা করি, তাই আমাদের বাড়ির পরিবেশও যাতে শান্তিপূর্ণ আবহ দেয় তা নিশ্চিত করতে হবে। 

Image: cozydecorshop.com

খাবার

পবিত্র এই সংযমের মাসে আমরা দিনের নির্দিষ্ট একটি সময় পর্যন্ত খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকি। তাই সেহরিতে আমাদের খাদ্য তালিকায়  পর্যাপ্ত পরিমাণে  প্রোটিন এবং ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। দীর্ঘ সময় ধরে রোজা রাখার পরে ইফাতারে উচিত স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া। ইফতারিতে ভাজা-পোড়া কিংবা অতিরিক্ত মিষ্টি কিছু খাওয়া উচিত নয়। কেননা এটি আমাদের শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।  ভাজাপোড়া খাবারের বিকল্প হিসেবে খাওয়া যেতে পারে ঘরে তৈরি বিভিন্ন ওভেন বেকড আইটেম। বাড়িতে তৈরি স্বাস্থ্যকর খাবার আমাদের শরীরের জন্য ভালো। আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, অতিরিক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা এবং প্রচুর পরিমাণ তরল পানীয় পান করা। অর্থাৎ আমাদের অবশ্যই একটি ব্যালেন্সড ডায়েট মেনে চলতে হবে। 

Image: sweetpillarfood.com

ইফতার প্রতুস্তি

ইফতার বানানোর ক্ষেত্রে পরিবারের সকল সদস্য মিলে  ইফতার তৈরি করতে পারেন।  কেউ ইফাতারের জন্য শরবত বা পানীয় প্রস্তুত করতে পারেন, অন্যজন রান্না/বেকিং এর দায়িত্বে থাকতে পারেন। আবার কেউ সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে সেটআপের দায়িত্ব নিতে পারেন। আর এই দায়িত্বগুলো কয়েকদিন পরপর পালটিয়ে নিতে পারেন। আর আজানের আগে ইফতার তৈরির তাড়াহুড়া এড়াতে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে।  এ কাজগুলো শুধুই ইফতার তৈরি বা বাড়ির কাজ নয়, পবিত্র রমজান শেষে আপনি দেখবেন, সবার সাথে মিলে করা ঘরের এই কাজগুলোও আপনি মিস করছেন।  

ভার্চুয়াল ইফতার

রমজান মানেই পরিবার, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব এবং পাড়া প্রতিবেশীদের মেলবন্ধন। বলা হয়ে থাকে ইফতার দোয়া কবুলের উত্তম সময়, তাই আমরা সবাই একত্রে ইফতারের আগে সৃষ্টিকর্তার নিকট দোয়া করে থাকি। প্রতিবারের মতো এবারও এমনটি হবেনা। তবে এতে মন খারাপ করার কিছু নেই। কারণ ইন্টারনেটের এই যুগে আমরা আয়োজন করতে পারি মাঝে ভার্চুয়াল দোয়া ও ইফতার সমাবেশের। যেখানে আমাদের সাথেই থাকবে আমাদের প্রিয়জনেরা। এটি অবশ্য বাড়িতে আনন্দময় পরিবেশের সৃষ্টি করবেনা। তবুও এই স্মৃতিটিই পরবর্তীতে হয়ে থাবে অনন্য।  

Image: islamiyet.tumblr.com

কর্ম তৎপর থাকা

বাড়িতে থাকার কারণে শরীরচর্চা বা ব্যায়াম অনেকেরই হয়ে ওঠে না। আর রোজার সময়ে এটি হতে পারে আমাদের অসুস্থতার কারণ। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে ইফতারের পর কিংবা ফজরের পর কিছু সময় বরাদ্দ রাখতে হবে শরীরচর্চা বা ব্যায়ামের জন্য। দৈনন্দিন রুটিনে থাকা নিয়মিত কিছু হালকা ব্যায়াম আমাদের শরীরকে রাখতে পারে ফিট এবং সুস্থ।  

সামাজিক সহায়তা বা অনুদান

রমজান মাসে আমরা সামাজিক বিভিন্ন কাজে বা কমিউনিটি সার্ভিসে বিভিন্ন ভাবে সহায়তা করে থাকি। যেহেতু আমরা এবারও বাহিরে যেতে পারবো না তাই খাবার কিনে বা পোশাক দিয়ে আমরা সরাসরি কাউকে সাহায্য নাও করতে পারি। তবে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় আমরা বাড়িতে বসে সহজেই আঙুলের ট্যাপেই বিভিন্ন অলাভজনক সংস্থায় অর্থ পাঠিয়ে একাজগুলোতে অংশগ্রহণ করতে পারি। এমন অনেক মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে, যা আমাদের বেনামে অনুদান দেওয়ার অনুমতি দেয়। আর এর মাধ্যমে আমরা ঘরে বসেই যাকাত আদায় করতে পারি। 

Image: britishhajtravel.com

কঠিন এই সময় কাটিয়ে ওঠার জন্য রয়েছে অভিনব কিছু সমাধান – এর মধ্যে কিছু আমরা এই ব্লগটির মাধ্যমে জানানোর চেষ্টা করেছি। সংকটকালীন এই সময় শেষে আমরা আশা করি সৃষ্টিকর্তা নতুন সুন্দর দিনের আগমন ঘটাবেন। আর এই আশা নিয়েই আমাদের উচিত পবিত্র রমজান মাস পালন করা। আশা করি, এই রমজান আমাদের জীবনে নিয়ে আসবে সুখ এবং সমৃদ্ধি। রমজান মুবারাক!

এই ব্লগটি English এ পড়ুন।

অনুবাদ:   জান্নাতুল তাজরিয়া ফার্সি

You Might Also Like

No Comments

Leave a Reply