আপনার ঘরের সাদা দেয়ালগুলোর হতবাক চাহনি কি আপনাকে ক্লান্ত করে তুলেছে? মনে হচ্ছে ঘরের সাজ-সজ্জায় কিছুটা রঙের ছোঁয়া দরকার, কিন্তু ঘরের রঙ বদলের এই ভাবনা আপনাকে বারবার ভীত করে তুলছে? তাহলে, একটি অ্যাকসেন্ট দেয়াল হতে পারে আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর!
ঘরে ভিন্ন রঙের ছোঁয়া বা প্যাটার্ন আনতে একটা অ্যাকসেন্ট দেয়ালই যথেষ্ট, যা আপনার ঘরকে অন্য সবার থেকে আলাদা করে তুলবে। ঘরের সম্পূর্ণ রঙ বদল না করে বা পুরো ঘরে ওয়ালপেপার না লাগিয়ে, শুধু একটা দেয়াল সাজালে সেটি আপনার ঘরকে আরও বেশি পরিশীলত এবং নান্দনিক করে তুলে এবং এটি পুরো ঘর পরিবর্তনের মতই প্রভাব ফেলতে সক্ষম।
অ্যাকসেন্ট দেয়ালের সবচেয়ে ভালো দিক হল এটি তুলনামূলক ঝামেলা মুক্ত এবং কম খরচের মধ্যেই করা যায় – শুধুমাত্র আপনার প্রিয় কিছু শিল্পকর্ম বা প্রিন্ট করা কিছু ছবি এবং আপনার ছবি দিয়ে দেয়ালে একটা ছবির গ্যালারী তৈরি করে ফেলতে পারেন। এমনকি আপনি শুধু ঘরের একটা দেয়াল রঙ করতে পারেন বা একটা দেয়ালে উজ্জ্বল কোন ওয়ালপেপার লাগাতে পারেন এবং এটুকুই আপনার ঘরের জন্য যথেষ্ট! একটা অ্যাকসেন্ট দেয়াল আপনার পছন্দের বহিঃপ্রকাশ করতে সাহায্য করবে এবং আশ্চর্যজনক ভাবে এটি আপনার ঘরকে সবার থেকে আলাদা করে তুলবে। তাই আর দ্বিধা না করে এগিয়ে যান এবং নিচের টিপসগুলোর সাহায্য নিয়ে সেট করে ফেলুন আপনার অ্যাকসেন্ট দেয়াল।
১। স্টেটমেন্ট পিস দিয়ে সাজিয়ে তুলুন
অ্যাকসেন্ট দেয়াল তৈরি করার এটিই সবচেয়ে সহজ উপায় এবং যারা নতুন নতুন এই এক্সপেরিমেন্ট করতে ইচ্ছুক তাদের জন্য সবচেয়ে কার্যকরী। অ্যাকসেন্ট দেয়াল তৈরি করতে বিশেষ পরিশ্রমের বা খরচের দরকার নেই এবং প্রফেশনাল ডিজাইনারেরও দরকার নেই। আপনার দেয়ালের মাঝ বরাবর কেবলমাত্র একটা বড় ছবি যোগ করে এই বিশেষ স্টেটমেন্ট তৈরি করে ফেলতে পারেন, যা আপনার অ্যাকসেন্ট দেয়ালের রঙ বা প্যাটার্ন হিসেবে কাজ করবে। আর হ্যাঁ, এটি ঠিক এতটাই সহজ!
২। এক রঙ্গা অ্যাকসেন্ট দেয়াল
অ্যাকসেন্ট দেয়াল তৈরি করার একটি দুর্দান্ত উপায় হল রঙের ব্যবহার – কেবল আপনার পছন্দের রঙটি বেঁছে নিন এবং এটা দিয়েই কাজ শুরু করে দিন। এমন একটা রঙ বেঁছে নিন, যেটি আপনার মনকে খুশিতে ভরিয়ে তুলতে সক্ষম, আপনাকে অনুপ্রাণিত করে অথবা আপনার মনে প্রশান্তি এনে দিতে পারে। তুলনামূলক ভাবে ছোট একটি দেয়ালে আপনি উজ্জ্বল রঙের ছোঁয়া দিতে চাচ্ছেন? অবশ্যই- আপনি এগিয়ে যেতে পারেন দ্বিধাহীন ভাবে! অন্যদিকে, বড় দেয়ালের জন্য বেঁছে নিতে পারেন হালকা কোন রঙ। তবে, আপনার মন যদি বলে আপনার শোবার ঘরের একটা দেয়াল উজ্জ্বল হলুদ বা ফিরোজা রঙের হবে, তাহলে আর অন্যকিছু না ভেবে, সেটিই করে ফেলুন!
৩। রঙের খেলা
আর একটি সহজ পন্থা হল যেকোনো রঙ নির্বাচন করুন এবং মনের ইচ্ছা মত তা দিয়ে রাঙিয়ে তুলুন। অবশ্যই, উজ্জ্বল রঙের অ্যাকসেন্ট দেয়াল বেশ ভাল লাগে, কিন্তু আপনি যদি তার মাঝে উত্তেজনাময়, উদ্যমী কিছুর ছোঁয়া লাগাতে চান, তবে কেন তা হবেনা? লম্বা ডোরাকাটা, বৃত্তাকার বা ভি-আকৃতির সেভরন – যে কোন একটা স্টাইল পছন্দ করে সাজিয়ে তুলুন আপনারা অ্যাকসেন্ট দেয়াল।
৪। একটা প্যাটার্ন ফুটিয়ে তুলুন
অ্যাকসেন্ট দেয়াল সাজানোর পরবর্তী উপায়টি হল, যেই দেয়ালে আপনি পরিবর্তন আনতে চাচ্ছেন, সেখানে ওয়ালপেপার ব্যবহার করুন। প্রাথমিকভাবে পুরো ঘরে ওয়ালপেপার লাগানোর পরিকল্পনা যদি আপনাকে অভিভূত করে থাকে, তাহলে এখন অ্যাকসেন্ট দেয়ালে ওয়ালপেপার ব্যবহার করাই আপনার জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত হবে, যা আপনার প্রথম ইচ্ছাটা পূরণ করে দিবে। অ্যাকসেন্ট দেয়ালের ওয়ালপেপারটা রুমের রঙের সাথে মিল রেখে ব্যবহার করলে, তা আপনার রুমে রঙের ছোঁয়া এনে দিবে। তবে, ওয়ালপেপার যদি আপনার জন্য ব্যয়বহুল হয়, তবে বিকল্প হিসেবে আপনি দেয়াল স্টিকার ব্যবহার করতে পারেন যা খুব সহজে লাগিয়ে ব্যবহার করা যায় এবং এটি স্বল্পমেয়াদের জন্য বেশ কার্যকর।
৫। প্যানেলড পারফেকসন
রুমের একটা দেয়াল রঙ করা বা ওয়ালপেপার লাগানো খুব ঝামেলার মনে হচ্ছে? চিন্তার কোন কারণ নেই। আপনার রুমে আধুনিক, গ্রামীণ বা প্রাকৃতিক একটা ছোঁয়া আনতে চাইলে ঘরের একটা দেয়ালে ব্যবহার করুন কাঠের প্যানেল। রুমের একটা অংশকে বেশি ফোকাস করতে চাইলে, যেমন আপনার বিছানার পিছনের দেয়াল বা পড়ার টেবিলের কর্নারে কাঠের প্যানেল ব্যবহার করতে হবে। প্যানেলিং করার জন্য আপনি ব্যবহার করতে পারেন প্যালেট উড যা আপনাকে একটা চিরাচরিত লুক এনে দিবে। আর আধুনিক লুকের জন্য ব্যবহার করতে পারেন ধূসর রঙের কাঠের প্যানেল।
৬। প্যাচওয়ার্ক
রঙ, ওয়ালপেপার বা কাঠের প্যানেল – কোনটাই মনঃপুত হচ্ছে না? তাহলে আপনার অ্যাকসেন্ট দেয়ালটি সাজিয়ে তুলুন প্যাচওয়ার্ক দিয়ে। সুলভ মূল্যে অ্যাকসেন্ট দেয়ালটি সাজাতে চাইলে ব্যবহার করুন কাপড়ের প্যাচওয়ার্ক। এটি আপনার ঘরে একটা বোহো লুক এনে দিবে। একটা শক্ত কার্ডবোর্ড বা পাতলা প্লাস্টিকের উপর আপনার পছন্দের কাপড়ের টুকরোগুলো লাগিয়ে বানিয়ে ফেলুন পছন্দসই প্যাচওয়ার্কটি। তারপর মাউনটিং টেপ দিয়ে লাগিয়ে দিন দেয়ালে।
৭। প্রকৃতির সাথে মিশে যান
আপনি কি সেই মানুষটি, যার একদম অকৃত্রিম, প্রাকৃতিক লুক পছন্দ? তাহলে আপনার জন্যই সবচেয়ে মানানসই হবে যদি রুমের যেই অংশে অ্যাকসেন্ট দেয়ালটি করতে চাচ্ছেন, সেখানের প্লাস্টার তুলে ফেলে নিচের ইটগুলো উম্মচিত করে দিন। এই লুকটি সবচেয়ে মানানসই হবে রান্নাঘরের যেকোনো একটি দেয়ালে এবং এর সাথে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইন্সপায়ারড আসবাবপত্র বেশ ভালো লাগবে।
৮। আপনার ছবিগুলো দিয়ে একটা গ্যালারি তৈরি করে ফেলুন
অ্যাকসেন্ট দেয়ালে আপনার ব্যক্তিতের ছোঁয়া কিন্তু কখনই ভুল হতে পারেনা, আর সেখানে যদি আপনার তোলা সবচেয়ে সুন্দর ছবিগুলো জুড়ে দেয়া যায় তাহলে এর চেয়ে সুন্দর আর কিছুই নেই। হার্ড ড্রাইভে যেই ছবিগুলো এত দিন শুধু শুধু পরে ছিল সেগুলো সব খুলে দেখুন, আর তা থেকেই বানিয়ে ফেলুন একটা ফটো কোলাজ। আপনার পছন্দের মুহূর্তগুলো সবসময় স্মৃতিচারণ করে আগলে রাখার সবচেয়ে সহজ উপায় হল ছবিগুলো দিয়ে অ্যাকসেন্ট দেয়াল সাজিয়ে ফেলা।
৯। এখন কয়টা বাজে?
একটা ঘড়ি কিন্তু শুধু সময় দেখার জন্য ব্যবহার না করে তা দিতে অ্যাকসেন্ট দেয়াল সাজিয়ে তোলা যায়। বিশাল আকৃতির একটা ঘড়ি ব্যবহার করে আপনি ঘরের একটা দেয়াল অন্য সবকিছু থেকে আলাদা করে তুলতে পারেন। এর আরও একটা বিশেষ সুবিধা কি জানেন? কেউ আর আপনাকে বার বার কয়টা বাজে জিজ্ঞেস করতে পারবেনা!
১০। যা ঠিক মনে হচ্ছে তাই করে ফেলুন
একটা সুসজ্জিত অ্যাকসেন্ট দেয়াল আপনার ঘরে ওয়াও ফ্যাক্টর এনে দিতে সক্ষম, আর তার জন্যই ঠিক কোথা থেকে শুরু করতে হবে, কি করতে হবে তা ঠিক সহজে নির্ধারণ করা যায়না। উজ্জ্বল হবে নাকি একটু কৌশলী হতে হবে? রঙ, ওয়ালপেপার নাকি প্যানেল ব্যবহার করতে হবে? সংক্ষেপে বলতে হলে, অ্যাকসেন্ট দেয়াল সাজানোর কোন সুনির্দিষ্ট নিয়ম নেই। অ্যাকসেন্ট দেয়াল হল আপনার ব্যক্তিত্ব প্রকাশের জায়গা এবং এটি আপনার ঘরকে অন্য সবার থেকে আলাদা করে আপনার ঘরকে আরও সুখকর করে তুলবে। সেটিই করুন যা আপনার জন্য সহজ আর ঠিক মনে হয় – এটি আপনার ঘরের সেই জায়গা যেখানে আপনি কিছু সাধারণ শিল্পকর্মও ব্যবহার করতে পারেন আবার পরিশীলিত কাঠের প্যানেলও ব্যবহার করতে পারেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, আপনি সেটিই করবেন যা আপনার মনে প্রশান্তি এনে দিবে এবং আপনার বাজেটের মধ্যে থাকবে!
আপনি যদি কোন পুরনো বাড়িতে থাকেন আর সেখানে একটু উজ্জ্বল রঙ ব্যবহার করে ঘরে আনন্দের ছোঁয়া দেয়ার জায়গা হল অ্যাকসেন্ট দেয়াল। আপনার বাসস্থানটি নতুন করে সাজিয়ে তোলার সবচেয়ে সহজ উপায় হল অ্যাকসেন্ট দেয়াল এবং এটি সাজানোর হাজারটা পন্থা আপনি পেয়ে যাবেন। তাই দেরি না করে, নিজের ব্যক্তিত্বকে ফুটিয়ে তুলুন আপনার অ্যাকসেন্ট দেয়ালে আর ঘরকে করে তুলুন আরও উজ্জীবিত।
প্রফেশনাল ইন্টেরিওর ডিজাইনারের সাহায্য পেতে যোগাযোগ করুন Sheraspace এর সাথে।
এই ব্লগটি English এ পড়ুন।
অনুবাদ: নিশাত সফুরা
No Comments