কোন রকম মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয় করা ছাড়া আপনি কি আপনার রান্নাঘর নতুন করে সাজাতে চাচ্ছেন? বাজেটের মধ্যে ব্যয়বহুল দেখাবে এমন ধরনের রান্নাঘর প্রায় অসম্ভব, তাইনা?কম খরচে আপনার রান্নাঘরকে পুনরায় ডেকোরেট করার ব্যাপারে আপনার মন পরিবর্তন করতে এই ব্লগটি সহায়ক হতে পারে। সাশ্রয়ী মূল্যে রান্নাঘর সাজানোর কিছু দ্রুত ও সহজ টিপস জানতে এই ব্লগটি পড়ুন।
কেবিনেটের দরজা পরিবর্তন করুন
ছোট ছোট পদক্ষেপে আগান এবং আপনার ইতোমধ্যেই যা আছে সেটা দিয়ে কাজ শুরু করুন। কেবিনেটের দরজা পরিবর্তন করতে হলে প্রথমে কেবিনেটের দরজা, বিভিন্ন নাট ও সামনের ফ্রেম সরাতে হবে কিন্তু কেবিনেটের বক্স গুলো যেখানে ছিল সেখনেই থাকবে। নিস্তেজ, কাঠের কেবিনেটের দরজা সরিয়ে নতুন দরজা লাগালে সেটা আপনার রান্নাঘরের একটি নতুন, সতেজ চেহারা এনে দিবে। নির্ভয়ে একটা প্যাস্টেল নীল বা আপনার পছন্দের যেকোন একটা রং যোগ করুন যা আপনার রান্নাঘরকে একটটি নতুন জীবন দিতে সাহায্য করবে। এতে করে আপনি যে ফলাফল পাবেন তা নিয়ে আপনাকে একদমই আফসোস করতে হবেনা।
আপনার দেয়াল সাজিয়ে তুলুন
আপনার কি পুরনো বাসনপত্র আছে যেগুলো আপনি সরিয়ে ফেলতে চান? পুনরায় ভাবুন এবং আপনার ভেতরকার সৃজনশীলতাকে জাগিয়ে তুলুন! আপনার ব্যবহৃত প্লেটগুলো দিয়ে সাজিয়ে তুলুন আপনার রান্নাঘরের দেয়াল। আপনার অব্যবহৃত প্লেটের কালেকশন দিয়ে দেয়াল সাজালে তা আপনার রান্নাঘরকে দিবে ভিন্নতার ছোঁয়া! তাহলে কেনই বা নতুন প্লেটের জন্য অযথা টাকা খরচ করবেন? এভাবে চিন্তা করুন, আপনি দেয়ালে এমন কিছু লাগাবেন যা আপনাকে পুরনো কিছু স্মৃতি মনে করিয়ে দেয় নাকি টাকা খরচ করে নতুন কিছু কিনে আনবেন, যেগুলো ভবিষ্যতে আর ভালো না লাগলে কোন এক বক্সে জায়গা করে নিবে?
কেবিনেটের নিচের আলোকসজ্জা
এটা এখন আর কোন রহস্য নয় যে একটা সুন্দর স্নিগ্ধ রান্নাঘরের জন্য প্রথমেই দরকার পর্যাপ্ত আলো। হ্যাঁ, সিলিং লাইট দিয়ে রান্নাঘরে পর্যাপ্ত আলো পাওয়া যায়, কিন্তু বেশির ভাগ সময়ই যেটা মিস হয়ে যায় তা হল কেবিনেটের নিচের আলোর ব্যবস্থা। কেবিনেটের নিচের আলোকসজ্জা আপনার রান্নাঘরে অবশ্যই আধুনিকতার ছোঁয়া এনে দিবে!
পর্যাপ্ত আলোর অভাবে কেবিনেটের নিচের কাউন্টার টপটি প্রায়শই অন্ধকারাছন্ন থাকে, কিন্তু কেবিনেটের নিচে আলোর ব্যবস্থা করলে তা সহজেই সেই অন্ধকারাছন্ন ভাব সরিয়ে আলোয় ভরিয়ে তুলবে। কেবিনেটের নিচের আলোকসজ্জা আপনার যেকোনো কাজকে সহজ করে তুলবে যেমন- শাকসবজি বা ফলমূল কাঁটা। এমন সাশ্রয়ী সংজোযন রান্নাঘরের আপনার রান্নার সময়কে আরও সুন্দর করে তুলবে!
ঝুলবাতির (পেনডেন্ট লাইট) ব্যবহার
রান্নাঘর সাজানোর ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান একটি অংশ হল রান্নাঘরের আলোকসজ্জা এবং সৌভাগ্যবসত, পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা খুব কম সময়ে এবং কম খরচে করা সম্ভব। আপনি অবাক হয়ে যাবেন যখন দেখবেন খুব স্বল্প বাজেটের মাঝেও কত কিছু করা যায়।
রান্নাঘরের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে তুলতে বারস্টুল সহ খোলা কাউন্টারের উপর লাগানো ঝুলবাতির জন্য মসৃণ লাইট বাল্ব ব্যবহার করা যায়। আলো নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করলে রোমান্টিক ডিনার থেকে শুরু করে স্বাচ্ছন্দ্যময় ঘরোয়া আসর, যেকোনো সময়ের মুড অনুযায়ী আলোক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
তিন রঙের প্যালেট ব্যবহার করুন
যেকোনো নকশার ক্ষেত্রে রঙের ব্যবহার অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং এই কাজটি খুব কম খরচেই আপনার রান্নাঘরে নতুনত্ব এনে দিবে। সঠিক রঙের ব্যবহার কোন কোন জায়গাগুলো সাজানোর ব্যাপারে আপনার বেশি মনোযোগী হওয়া উচিত তা নির্ধারণ বেশ সহজ করে দিবে।
হুট করে নিখুঁত রঙের সমন্বয় করা যায়না, এটি সুপরিকল্পিত ভাবে করতে হয় যা সম্ভব তিন রঙের প্যালেট ব্যবহার করে।
রং ১ হল বর্তমানে আপনার রান্নাঘরের রং যা অপরিবর্তিত থাকবে এবং এর সাথে মিল রেখেই অন্যান্য রং করা হবে। রং ২ হবে আপনার পছন্দের কোন একটি নিরপেক্ষ রং যা রং ১ এর সাথে ভালোভাবে মিশে যায়। পরিশেষে, রং ৩ হবে কোন একটি উজ্জ্বল রং যা আপনার রান্নাঘরে অনন্যতা ও প্রানবন্ত শক্তি যোগ করবে।
শুনতে জটিল মনে হলেও আপনি নিজে একবার কাজ তা শুরু করলে এটি মোটেও কঠিন কোন ব্যপার না। কাজ করতে গেলে আপনি নিজ থেকেই বুঝে যাবেন যে আপনি কোন রং ব্যবহার করতে চান আপনার রান্নাঘরে।
পূর্ণাঙ্গ স্টোরেজ তৈরি করুন
স্ন্যাকস বা জলখাবারের জন্য আলাদা ড্রয়ারের ব্যবস্থা করুন যাতে করে আপনি সহজেই তা খুঁজে পান। এই ড্রয়ারগুলোকে আপনি সহজেই খুঁজে পাওয়া যায় এমন জায়গায় রাখতে পারেন অথবা মুভমেন্টে সুবিধার জন্য আপনি চাইলে স্লাইডিং ডোর লাগানোর ব্যবস্থাও করতে পারেন। ফ্রেশ ব্রেড একটি ঝুড়িতে রাখুন এবং গোছানো আর পরিপাটি লুক আনতে সিরিয়ালের কন্টেইনারগুলো জমিয়ে না রেখে সরিয়ে ফেলুন।
খোলা তাক
অনেকেই খোলা তাকের ব্যবহার থেকে দূরে সরে থাকতে চান কারণ তারা মনে করেন তাকগুলোর এলোমেলো ও বিশৃঙ্খল অবস্থা সবাই দেখে ফেলবে। প্রবাদে বলে- “পরিবর্তন তখনই আসে যখন আপনি আপনরা স্বাচ্ছ্যন্দের জায়গা থেকে বের হবেন”- তাই চলুন আজই আমরা আমাদের নিজেদেরকে চ্যালেঞ্জ করি এবং সাহসিকতার সাথে এই ভয়কে জয় করি!
ছোট ছোট গাছপালা সহ কাঠের তাক আপনার রান্নাঘরে আভিজাত্যের পরিচয় এনে দিবে এবং প্রধান আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে কাজ করবে। এখানে অবশ্যই থালা এবং বাটি রাখবেন আর সাজানোটাকে আরো আনন্দের করার জন্য সাথে অবশ্যই কিছু বই ও ফুলদানিও রাখতে পারেন।
আপনি যদি এখনও দ্বিধান্বিত থাকেন, তাহলে দেয়ালের শুধুমাত্র যে কোন একদিকে খোলা তাক রাখুন এবং আপনার মূল্যবান জিনিসপত্র সব কেবিনেটে রাখুন।
রান্নাঘরের সরঞ্জাম স্টেইনলেস স্টিল রং করুন
স্টেইনলেস স্টিলের সরঞ্জাম নেই? চিন্তার কোন কারণ নেই, একটা ছোট্ট টিপস আছে, আপনার রান্নাঘরের সরঞ্জামাদি স্টেইনলেস স্টিল রং করে ফেলুন! নতুন সরঞ্জামাদি না কিনে অল্প খরচেই আপনি আপনার রান্নাঘরে একটা সমসাময়িক লুক দিতে পারেন।
সকালের নাস্তার আলাদা কর্নার যোগ করুন
আপনার রান্নাঘরের যেই জায়গাটি অব্যবহৃত অবস্থায় আছে, সেই জায়গাটিতে তৈরি করে ফেলুন সকালের নাস্তার জন্য আলাদা একটি কর্নার। আপনি খুবই কম খরচে একটা আরামদায়ক লাউঞ্জ তৈরি করে ফেলতে পারেন। পছন্দের বইটি হাতে নিয়ে গরম এক কাপ কফি খাওয়ার জন্য অথবা দ্রুত খাবার খাওয়ার জন্যও এটি হবে অত্যন্ত উপযোগী একটা জায়গা।
এছাড়াও, সকালের নাস্তার কর্নারটির নিচে কিছু ড্রয়ার যোগ করে দিলে বাড়তি কিছু স্টোরেজ পাওয়া যাবে। এতে করে আপনি একটি বহুমুখী ব্যবহারযোগ্য কর্নার পেয়ে যাবেন।
এখনই শুরু করুন!
আপনার রান্নাঘরটিকে পুনরায় সুন্দর করে সাজিয়ে তুলতে শুধু দরকার আপনার মনোযোগ এবং কিছু অনুপ্রেরণা। যত টাকাই খরচ করুন যদি আপনি নিজ থেকে কিছু সময় দিতে উৎসাহী না হন তাহলে কখনোই আপনার রান্নাঘরে ঘরোয়া ছোঁয়া আনা সম্ভব হবেনা।
যেহেতু আপনি এখন বাজেটের মধ্যে রান্নাঘর পুনরায় সাজানোর রহস্যগুলো সব জেনেই গেলেন, তাহলে আর দেরি কেন? নতুন ভাবে সাজিয়ে তুলুন আপনার রান্নাঘরকে, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জিনিসগুলো পরিষ্কার করুন এবং প্রতিটি কর্নার আপডেট করে ফেলুন।
প্রফেশনাল ইন্টেরিওর ডিজাইনারের সাহায্য পেতে আজই Sheraspace এর সাথে যোগাযোগ করুন!
অনুবাদ: নিশাত সফুরা
No Comments