আমাদের ঘরের ইন্টেরিওর আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর কতটা প্রভাব ফেলে আমরা উপলব্ধি করতে পেরেছি করোনাকালীন সময়ে দীর্ঘদিন গৃহবন্দী থাকার পর। চীনা ফেং শুই এবং ভারতীয় বাস্তু শাস্ত্রের মতো পরিবেশ মনোবিজ্ঞানীরা আমাদের দেখিয়েছেন, কীভাবে ঘরের ইন্টেরিওর ডিজাইনের উপাদানগুলো আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
বাড়ির ইন্টেরিওর নকশা করার সময় ঘরে বসবাসকারী সকলের মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারে উপেক্ষা করে থাকি। ডিজাইনের সময় বেসিক কিছু নিয়ম মানলে এবং ঘর সাজানোর জন্য সামগ্রীগুলো বা এলিমেন্টগুলো আমাদের ঘরের ইন্টেরিওরে বিরাট পার্থক্য এনে দিতে পারে। আপনি যদি আপনার ঘরে একটি শান্ত এবং আরামদায়ক আবহ চান, তাহলে আজকের এই ব্লগটি আপনার জন্যই। আজকে এমন ৫টি ডিজাইনের আইডিয়া সম্পর্কে জানব, যা আপনার ঘরে নিয়ে আসবে নতুনত্ব।
১। সঠিক রঙের ব্যবহার নির্ধারণ করা
ঘরকে সাজিয়ে তোলার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হচ্ছে ঘরে সঠিক রঙের ব্যবহার। ইন্টেরিওর ডিজাইনে রঙের ব্যবহারের পেছনে আমাদের মনের প্রভাব কাজ করে। কিছু কিছু রঙ আমাদের মনকে শান্ত এবং চাপমুক্ত করতে সাহায্য করে, আবার কিছু কিছু রঙের ব্যবহারে আমরা অবসাদগ্রস্ত কিংবা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত অনুভব করি। তাই ঘরের ইন্টেরিওরের জন্য সঠিক রঙ বেছে নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বেইজ কিংবা ট্যান জাতীয় হালকা টোনের রঙ ব্যবহারে ঘরকে আলোবাতাস পূর্ণ এবং আরামদায়ক মনে হয়। অন্যদিকে, হলুদ এবং কমলার মতো উজ্জ্বল রঙ আপনার সৃজনশীলতাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। আপনার পছন্দের রঙগুলোর সংমিশ্রণে আপনি ঘরকে করে তুলতে পারেন শান্তিময় এবং স্বস্তিদায়ক।
২। ঘরে প্রাকৃতিক আলো এবং বাতাস প্রবেশ করার ব্যবস্থা
আপনি যদি একজন প্রকৃতিপ্রেমী হন, তাহলে ঘরের অন্দরসজ্জাই আপনার সৃজনশীলতাকে ফুটিয়ে তুলতে পারে। মানসিক সুস্থতার জন্য ঘরে প্রাকৃতিক উপকরণ ব্যবহারের বিকল্প কিছু হয়না। মনকে ফুরফুরে করে তুলতে পারে ঘরে সূর্যের প্রাকৃতিক আলো। প্রাকৃতিক আলো এবং বাতাস মানুষের কর্মক্ষমতা এবং শক্তিকে বাড়িয়ে দিতে পারে। ঘর সুআলোকিত থাকলে তা ঘরের আবহতে একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। বড় জানালা এবং খোলা দরজার ব্যবহারে ঘরে প্রাকৃতিক আলো এবং বাতাসে পরিপূর্ণ হতে পারে।
৩। ঘরের প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহার
প্রাকৃতিক উপাদান ঘরে সতেজতা এবং প্রফুল্ল পরিবেশ এনে দেয়। ইনডোর প্ল্যান্ট এবং উইন্ডো বক্স ঘরে নিয়ে আসে সবুজ ছোঁয়া। গাছ আমাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতায় প্রভাব ফেলে, যা প্রভাব ফেলে আমাদের অফিসের ক্ষেত্রেও। গাছ বা ইনডোর প্ল্যান্ট শুধুমাত্র ঘরকেই সাজিয়েই তোলে না বরং বাতাস পরিশুদ্ধ করতে এবং মনকে সতেজ করতেও সাহায্য করে। আমাদের মনকে আনন্দময় করে তুলতে ঘরে রাখা ফুল খুবই দারুণ কাজ করে। ফুল আমাদের ঘরে প্রাকৃতিক পরিবেশের ছোঁয়া নিয়ে আসে এবং পজিটিভ পরিবেশ তৈরি করে। তাই ফুল রাখতে পারেন আপনার সৌন্দর্য বর্ধনে।
৪। আরামদায়ক এবং প্রশান্তিময় পরিবেশ সৃষ্টি
আসবাব কিংবা বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে ঠাসা ঘরটিতে পরিপূর্ণ প্রশান্তি পাওয়া যায়না। মিনিমাল অর্থাৎ কম সংখ্যক জিনিস ঘরে থাকলে তা হাঁটাচলার জন্য আরামদায়ক। ঘরের আসবাবপত্রের আকার এবং সঠিক জায়গা নির্ধারণ করাটা খুবই জরুরি, কারণ এটি আমাদের মানসিক প্রতিক্রিয়ার ওপর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই ঘরের স্বাচ্ছন্দ্য বজায় রেখে ঘরের উপাদান সমূহ নির্ধারণ করা প্রয়োজন।
ঘরে আমাদের থাকার রুমটিই আমদের সঙ্গী হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। কেনানা দিনশেষে আমরা আমাদের প্রিয় মানুষদের নিয়ে সেই ঘরটিতেই ফিরে আসি। ঘরকে যেন বিচ্ছিন্ন মনে না হয় সেটি বিবেচনায় রাখতে হবে। ডাইনিং, রান্নাঘর কিংবা লিভিং রুমে যাতায়াতে যেন কোন বাঁধা সৃষ্টি না হয়, সেটি খেয়াল রাখতে হবে। ঘরে বসার ব্যবস্থা এমন ভাবে ডিজাইন করতে হবে যেন সবাই মিলেমিশে একসাথে বসা যায় এবং শান্তিপূর্ণ আবহের সৃষ্টি হয়।
৫। মন ভালো রাখতে আর্ট এর ব্যবহার
আর্টের ব্যাপারে যখন আমরা কথা বলি, তখনই মাথায় আসে কোন হাতে আঁকা পেইন্টিং এর কথা। কিন্তু আর্ট বা শিল্প হচ্ছে এর চেয়েও বেশি কিছু। মাটির তৈরি মৃৎশিল্প, সিরামিক, ভাস্কর্য, কাঁচের তৈরি জিনিসপত্রও একেক ধরনের শিল্প। নিজেদের অভিব্যক্তি কিংবা রুচিকে ফুটিয়ে তোলার মাধ্যম হচ্ছে এই শিল্প, যা ঘরের শৈল্পিক সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দেয় বহুগুণে।
আমাদের মনকে চাপমুক্ত করতে আর্ট বা শিল্প প্রদর্শন একটি জনপ্রিয় মাধ্যম। মানুষের মস্তিষ্ক রঙ এবং নকশার সংস্পর্শে এলে খুব দ্রুত একটি সম্পর্কে তৈরি করে। তাই আর্ট বা শিল্প আপনার ঘরে এনে দিতে পারে ইতিবাচক একটি পরিবেশ।
এই ৫টি টিপস এর মাধ্যমে আপনি ঘরে একটি উষ্ণ এবং সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারেন। ঘরের ইন্টেরিওরের সহজ কিছু পরিবর্তন আপনার ঘরে নিয়ে আসবে ইতিবাচক পরিবর্তন এবং সুন্দর পরিবেশ।
প্রফেশনাল ইন্টেরিওর ডিজাইন সহযোগীতা পেতে অথবা অনলাইনে ইন্টেরিওর ডিজাইনের পরামর্শের জন্য, আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন Sheraspace এ!
অনুবাদ: জান্নাতুল তাজরিয়া ফারসি
No Comments