আমাদের দেশে গ্রীষ্মের উষ্ণ এবং আর্দ্র আবহাওয়ার সাথে মানিয়ে চলা সহজ কথা নয়। এই গরমে খানিক স্বস্তির জন্য আপনি যদি এয়ার কন্ডিশনারের বিকল্প খুঁজে থাকেন, তাহলে আজকের এই ব্লগটি আপনার জন্যই। গ্রীষ্মের তাপ থেকে বাঁচতে জেনে নিন ৭টি টিপস, যা আপনার বাড়িকে প্রাকৃতিকভাবে শীতল রাখতে সাহায্য করবে।
১। ক্রস ভেন্টিলেশন
অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় না করেই বাড়িকে শীতল রাখার কার্যকরী উপায়গুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে ক্রস ভেন্টিলেশন। গ্রীষ্মকালে আপনার বাড়ির আভ্যন্তরীণ তাপ দূর করতে ঘরের জানালাগুলো খুলে দিন। আর এর জন্য সবচেয়ে ভালো সময় হচ্ছে সন্ধ্যা থেকে দুপুরের কড়া রোদ ওঠার পূর্ব পর্যন্ত। আপনি যদি মশা কিংবা পোকামাকড় নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন তাহলে জানালায় নেট লাগিয়ে নিতে পারেন। এতে আপনার ঘরের তাপ বের হয়ে যাবে এবং প্রাকৃতিক ঠাণ্ডা বাতাসে ঘর পরিপূর্ণ হবে।
২। হালকা পর্দার ব্যবহার
জানালা দিয়ে আসা বাহিরের অতিরিক্ত রোদ আপনার বাড়ির তাপমাত্রা বাড়িয়ে ঘরের পরিবেশকে উষ্ণ করে তুলতে পারে। তাই অতিরিক্ত রোদ এড়াতে ঘরে পর্দা লাগানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। পর্দা নির্বাচনের ক্ষেত্রে গাঢ় রঙ এবং ভারী কাপড়ের পর্দা এড়িয়ে চলতে হবে। গরমে আপনার ঘরের জন্য সাদা কিংবা হালকা রঙের সুতি কাপড়ের পর্দা বেছে নিন, যা অন্যান্য রঙিন কাপড়ের মতো তাপ শোষণ না করে। এছাড়াও জুট কিংবা বাঁশের ঝাঁপা কিংবা পার্টিশন সূর্যের বাড়তি আলো প্রতিরোধ করতে পর্দার বিকল্প হিসেবে দারুণ কাজ করে। আর ঘরে সূর্যের অতিরিক্ত তাপ এড়াতে দিনের বেলা পর্দা দিয়ে ঢেকে রাখতে ভুলবেন না।
৩। হালকা রঙের ব্যবহার
আমরা জানি, সাদা রঙ ইউভি রশ্মি (UV Ray) প্রতিফলিত করে এবং বাড়তি তাপ শোষণ করেনা। সুতরাং আপনার আপনার বাড়ির ছাদে বা দেয়ালে সাদা চুনের একটি স্তর বা প্রলেপ দিতে পারেন। এটি আপনার বাড়িকে শীতল রাখতে সাহায্য করবে। তবে বৃষ্টিতে এই চুন ধুয়ে যেতে পারে তাই গরমকাল আসলে পুনরায় লাইমওয়াশ করতে হবে। বাড়িতে উজ্জ্বল এবং গাড় রঙের চেয়ে হালকা রঙের ব্যবহার ঘরকে বেশি স্বস্তিদায়ক করে তুলতে পারে। তাই আপনার বাড়ির দেয়ালে সাদা বা হালকা রঙ ব্যবহার করুন।
৪। অপ্রয়োজনীয় বা অব্যবহৃত জিনিস অপসারণ করুন
বাড়িতে অতিরিক্ত কিংবা অপ্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে বোঝাই থাকলে খুবই এলোমেলো এবং বিশৃঙ্খল দেখায় এবং অনেকসময় তা বায়ু সঞ্চালনে ব্যাঘাত ঘটায়। তাই বাড়ির অতিরিক্ত জিনিসগুলোকে সরিয়ে ফেললে বায়ু সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এবং স্বস্তির ছোঁয়া পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে আপনার প্রয়োজনের ওপর নির্ভর করে আপনি ঘরের সামগ্রিক ডিজাইনের পরিবর্তন করতে পারেন এবং সহজেই ব্যবহারযোগ্য স্টোরেজ বানিয়ে নিতে পারেন। আপনার বাড়ির অতিরিক্ত এবং অপ্রয়োজনীয় আসবাবপত্র অপসারণ করলে ঘর অধিক জায়গা পাওয়া যাবে এবং শান্তিদায়ক হবে। আর এর মাধ্যমে আপনি শারীরিক ও মানসিক পরিতৃপ্তিও উপভোগ করতে পারবেন।
৫। বৈদুতিক যন্ত্র আনপ্লাগ করুন
আমরা অনেক সময়ে এটি উপলব্ধি করতে পারিনা যে, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি আমাদের বাড়ির ভিতরে তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। এমনকি অযথা চালিয়ে রাখা বেশিরভাগ নিষ্ক্রিয় ডিভাইস থেকেও তাপ নির্গত হয়। তাই ব্যবহার না করলে বাড়ির ইলেকট্রিক ডিভাইসটি অবশ্যই বন্ধ রাখুন। ঘরের তাপমাত্রা কমাতে স্মার্ট পাওয়ার স্ট্রিপ ব্যবহার করুন। অতিরিক গরম এড়াতে ওয়াশিং মেশিন, ডিশওয়াশার, চুলা, ওভেন ইত্যাদির মতো ডিভাইসগুলো দিনের বেলায় ব্যবহার এড়িয়ে চলুন।
৬। ঘরে গাছ লাগান
গাছ আমাদের ঘরে সৌন্দর্য বর্ধন করে এবং বায়ু পরিশোধনে দারুণ উপকারী ভূমিকা পালন করে। গাছ আমাদের বাড়ির প্রাকৃতিক বায়ু সঞ্চালনের মাধ্যমে গ্রীষ্মের তাপ থেকে ঘরকে শীতল রাখতে সাহায্য করে। ইনডোর প্ল্যান্ট আমাদের ঘরে প্রশান্তির অনুভূতি দেয় এবং আমাদের মানসিক চাপ হ্রাস করতে সাহায্য করে। ছোট-বড় উভয় উদ্ভিদই আমাদের বাড়িকে শীতল রাখতে সহায়তা করতে পারে। গ্রীষ্মে সূর্যের আলো এড়াতে জানালার পাশে রাখতে পারেন লম্বা এবং ছায়াযুক্ত পাম গাছ। এছাড়া বারান্দা কিংবা জানালার গ্রিলে রাখতে পারেন লতানো গাছ, যা আপনার ঘরে শীতল অনুভূতি দিবে। ইনডোর প্ল্যান্ট নিয়ে বিস্তারিত জানতে পড়তে পারেন আপনার ঘরের জন্য ১০ টি ইনডোর প্ল্যান্ট এই আর্টিকেলটি। আর আপনার যদি একটি লন কিংবা ছাদ থাকে, তাহলে আপনি ডিজাইন করতে পারেন একটি বাগান। যা আপনার বাড়িকে স্বাভাবিকভাবে শীতল রাখতে সহায়তা করবে।
৭। সঠিক বাতির ব্যবহার করুন
লাইটের ব্যবহার আমাদের ঘরের তাপমাত্রাকে প্রভাবিত করে। এলইডি কিংবা সিএফএল বাতির চেয়ে সাধারণ বাল্বগুলো অতিরিক্ত তাপমাত্রা উৎপাদন করে। শুধু তাপমাত্রাই নয় সাধারণ বাল্বগুলোর জন্য অতিরিক্ত বিদ্যুতের প্রয়োজন পড়ে। তাই ঘরে এলইডি কিংবা ফ্লুরোসেন্ট বাতি ব্যবহার করুন, যা অতিরিক্ত তাপমাত্রা উৎপাদন করেনা এবং আপনার কষ্টার্জিত অর্থও বাঁচিয়ে থাকে। আর অবশ্যই কাজ শেষে লাইট বন্ধ করার কথা মনে রাখতে হবে!
আমাদের মতো গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলগুলোর জন্য তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ খুবই প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। আর তাই গ্রীষ্মের তাপদাহে প্রাকৃতিক উপায়ে ঘরকে শীতল রাখার জন্য এই উপায়গুলো খুবই কার্যকরী। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে উষ্ণ আবহাওয়া আমাদের জন্য একটি সমস্যা হিসেবে দাঁড়িয়েছে। তাই একটু স্বস্তি পেতে আমাদের দরকার এর সঠিক সমাধান, যা পরিবেশেও একটি দীর্ঘমেয়াদী ভূমিকা রাখতে পারে।
প্রফেশনাল ইন্টেরিওর ডিজাইন সহযোগীতা পেতে অথবা অনলাইনে ইন্টেরিওর ডিজাইনের পরামর্শের জন্য, আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন Sheraspace এ!
এই ব্লগ টি English এ পড়ুন ।
অনুবাদ: জান্নাতুল তাজরিয়া ফারসি
No Comments