বাঙালি জাতিসত্তা আমাদের পরিচয়ের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমাদের দেশীয় বৈশিষ্ট্যগুলি প্রায়শই কোনো না কোন ভাবে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে চিত্রিত হয়। তাহলে কেনই বা আমরা আমাদের গৃহ সজ্জায় আমাদের সমৃদ্ধ ইতিহাস এবং সংস্কৃতির ছোঁয়া রাখব না? এই ব্লগের মাধ্যমে জেনে নিন আপনার বাড়ির অন্দর সজ্জার বাঙালিয়ানার ছোঁয়া আনার ৭ টি উপায়।
দেয়ালে নকশী কাঁথার ব্যবহার
দেশীয় ছোঁয়া আনার সবচেয়ে সহজ উপায় হল ফ্রেমে বাঁধানো ঐতিহ্যবাহী কোন শিল্পকর্ম আপানর বাড়ির দেয়ালে ঝুলানো। এটি আপানর জাতিসত্তার বহিঃপ্রকাশের সাথে সাথে আপনার ঘরে একটি মার্জিত ভাব এনে দিবে। এটি হতে পারে প্রচলিত বাংলার চিত্রশিল্প অথবা দেশি লেখা বা চিত্র সমৃদ্ধ কোন শিল্পকর্ম। আপনি নকশী কাঁথা বা নকশী কাঁথা থেকে অনুপ্রাণিত কোন শিল্পকলা ঝুলিয়েও এই ছোঁয়া আনতে পারেন। উজ্জ্বল রঙ আর বাঙালি সংস্কৃতি যে একে অপরকে ছাড়া অপূর্ণ সেটি প্রকাশের অন্যতম উপায় হল এই শিল্পকর্মগুলো দিয়ে অন্দর সাজানো।
দেশীয় কাপড়ের ব্যবহার
আমাদের দেশের প্রতিটি অঞ্চলের নিজস্ব পরিচয়, গল্প আর ঐতিহ্য আছে। উদাহরণস্বরূপ, অসাধারন জামদানি তৈরি করা টাঙ্গাইলের ঐতিহ্য। রাজশাহী তার রাজশাহী সিল্ক এর জন্য সুপরিচিত। আরও বিশেষ দেশীয় কাপড়ের মধ্যে আছে খাদি, মসলিন, পাটের কাপড় ইত্যাদি। অতএব, খাবার টেবিলে জামদানী কাপড়ের তৈরি একটি টেবিল রানার দারুনভাবে বাঙালিয়ানার প্রকাশ ঘটাবে। এমনকি, রাজশাহী সিল্কের কুশন কভার বা মসলিনের পর্দা আপনার অন্দরের বাঙালিয়ানা বেশ খানিকটা বাড়িয়ে দিবে। বেডশিটের জন্য হ্যান্ডক্রাফ্টেড ব্লক প্রিন্ট করা চাদর ব্যবহার করলেও তা আপনাকে হতাশ করবেনা।
স্টেটমেন্ট কর্নার (Statement corner) সাজানো
ঘরের একটি জায়াগায় Statement corner আপনার কল্পনার চেয়েও বেশি ঘরের অভ্যন্তরীন সজ্জাকে সুন্দর করে তুলতে পারে। একটি শতরঞ্জি বা পাঁটের মাদুরের উপর কিছু বালিশ অথবা আমাদের কাছে সুপরিচিত কোলবালিশ দিয়ে একটা আরামদায়ক বসার জায়গা তৈরি করে নিতে পারেন। আপনি যদি আরও সাজিয়ে কিছু করতে চান তবে একটি ডিভান না পুরানো ট্রাঙ্ক আপনাকে সাহায্য করতে পারে। নিজের দেশীয় কর্নারটিকে আরো আকর্ষণী করে তুলতে ব্যবহার করতে পারেন ফ্যাকাসে হলদে-খয়েরি রং, পোড়া কমলা বা গাঁড় খয়েরি রং।
বাংলাদেশী হস্তশিল্প এবং ঐতিহ্যবাহী সামগ্রীর ব্যবহার
সূক্ষ্ম শিল্পের প্রকাশ ঘটে এমন সব শোপিসগুলো দিয়ে সাজাতে পারেন আপনার অন্দর। এই ক্ষেত্রে বাঙালিয়ানা আনাতে চাইলে প্রথমেই যে জিনিসটার কথা আমাদের মনে আসবে তা হল ছোট রিস্কশা মডেলের কোন শোপিস। এটি তুলে ধরে দেশীয় কারুশিল্পের কাজ এবং আপানর ঘরে সম্পূর্ণ দেশি আভা এনে দিবে।
এশীয় উপমহাদেশের মধ্যে বাংলাদেশের কারিগরি শিল্পের একটি সমৃদ্ধশালী ইতিহাস আছে। কাজেই, মৃৎশিল্প বা মাটির তৈরি সামগ্রী বাঙালিয়ানা প্রকাশের হাতিয়ার হতে পারে। মাটির তৈরি সামগ্রী বা পোড়ামাটির ফুলদানী আপনার বসার ঘরের বিশেষ সংযোজন হতে পারে। সুলভ মূল্যের এই পোড়ামাটির গৃহ সজ্জার সামগ্রীগুলো শুধু আপনার মানিব্যাগের জন্যই ভালো হবে তা না, সেই সাথে আপনার ঘরে একটা কোমল কমলা রঙের আভা ছড়িয়ে দিবে। এছাড়া, যেকোনো পারিবারিক আয়োজনে, বাঙ্গালিয়ানার ছোঁয়া আনতে মাটির তৈরি বাসনে পরিবেশন করতে পারেন সুস্বাদু খাবার। আপনার অথিতি শুধু যে খাবার পছন্দ করবে তা না, সেই সাথে আপনার উপস্থাননাও উপভোগ করবে।
দোলানা নিয়ে ঝেড়ে ফেলুন সকল চিন্তা
বাঙালিয়ানা প্রকাশের জন্য দোলনা একটি অতি সুপরিচিত সজ্জা সামগ্রী। ঘরের কমন জায়াগায় দোলনা ঝুলিয়ে তাতে কিছু বালিশ দিয়ে আরামদায়ক করে তুলতে পারেন এবং জায়গাটি হয়ে উঠবে আপানর ঘরের সবচেয়ে আকর্ষণী স্থান। আর পাশে আপনি যোগ করে দিতে পারেন একটি বুকশেলফ যাতে রাখতে পারেন আপনার প্রিয় রবি ঠাকুরের গল্পের বই বা আপনার ছোট্ট সোনামণির জন্য সুকুমার রয়ের কবিতার বই। আপানর একান্ত কিছু সময় কাটানোর জন্য ধোঁয়া ওঠা এক কাপ চা আর অন্য হাতে একটা বই নিয়ে বসে যেতে পারেন বিশ্রাম করার জন্য এখানে। আর থেকে বেশি আর কি বা বাঙালি চাইতে পারে?
আলোকসজ্জা
জাঁকজমকপূর্ণ ঝাড়বাতি বা ঝুলবাতির পরিবর্তে হারিকেন ল্যাম্প দিয়ে ঘরের আলোকসজ্জা করা যেতে পারে। এটি শুধু গ্রাম্যতার ছোঁয়াই এনে দিবেনা একই সঙ্গে হালকা অন্ধকারের উষ্ণতায় ঘর ভরিয়ে তুলবে। ঐতিহ্যবাহী গ্রাম-বাংলার ছোঁয়ার জন্য আপনি গামছা কাপড়ের ঝুলবাতি ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও, আধুনিকতা আর পটুতা প্রকাশের জন্য বেতের তৈরি ঝুলবাতিগুলো অন্দরে বাঙালিয়ানা ফুটিয়ে তুলতে অতুলনীয়।
ক্লাসিক কাঠের আসবাব ব্যবহার
অনুপ্রেরণার জন্য অতিতের স্মৃতি রোমন্থন করা সবচেয়ে কার্যকারী উপায়। হ্যাঁ, আমরা সেই আরামকেদারার কথা আপনাকে মনে করিয়ে দিচ্ছি যেখানে বসে আপনার দাদু অলস সন্ধ্যা পাড় করতেন। আপনি যদি গৃহসজ্জার এমন অমূল্য সম্পদের উত্তরাধিকারসূত্রে মালিক হওয়ার মত যথেষ্ট ভাগ্যবান হন তবে এখনই সময় এর উপর পরে থাকা ধুলো পরিষ্কার করে আপনার বারান্দায়, এমনকি বসার ঘরের এক কোণে যায়গা করে দেয়া। বিকল্পস্বরূপ, পুরান ঢাকায় একটু ঘুরে আসতে পারেন আপনার কাঙ্ক্ষিত আরামকেদারার জন্য। স্টোরেজের জন্য ফুলের নকশাতে তৈরি হাতে বানানো কাঠের আলমারি বানাতে পারেন। এটি স্টোরেজ হিসেবেও কাজ করবে আবার আপনার ঘরের সৌন্দর্যও বৃদ্ধি করবে। তার উপর, আলমারির হাতলে যদি আপনি পিতল রং ব্যবহার করেন তবে তা বাঙালিয়ানার ছোঁয়াটা আরও বাড়িয়ে দিবে।
তাহলে দেখা যাচ্ছে অল্প কিছু সাজসজ্জার সামগ্রী দিয়েই, আপনি যে বাঙালিয়ানা নান্দনিকতার স্বপ্ন দেখেছেন তা অর্জন করতে পারেন!
পেশাদার ইন্টেরিওর ডিজাইন পরামর্শের জন্য Sheraspace এর সাথে আজই যোগাযোগ করুন!
এই ব্লগটি English এ পড়ুন।
অনুবাদ: নিশাত সফুরা
No Comments