ছাত্রাবাস বা হোস্টেলের ঘরগুলো কলেজ বা ইউনিভার্সিটি জীবনে শিক্ষার্থীদের আপন নীড়ের মতো। তাই, ডর্ম রুমে ঘরোয়া ও চিত্তাকর্ষক পরিবেশের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
আপনার হয়তো নিজের জায়গাটি সাজিয়ে তোলার পুরো স্বাধীনতাই আছে, তবে কিভাবে সাজাবেন সেটা ঠিক করার ব্যাপারটা খুব গোলমেলে মনে হচ্ছে। হোস্টেল ঘরে এটাই আপনার প্রথম অভিজ্ঞতা হোক অথবা পুরোনো ঘরটি নতুন করে ফিটফাট করতে চাওয়া হোক, আমরা আছি আপনার সাথে!
আপনার আবাসটি আরো গোছানো, বাসযোগ্য, তৃপ্তিকারক করে তুলতে, এই রইলো ৮টি উপায় যা দিয়ে আপনি আপনার ডর্ম রুমটি সাজিয়ে নিতে পারেন।
১। বহুমূখি আসবাব দিয়ে ভরিয়ে তুলুন
সচরাচর ইউনিভার্সিটি হোস্টেলে জায়গা থাকে খুব সীমিত, তাই আপনাকে হতে হবে স্মার্ট আর ঘরে আনতে হবে এমন আসবাব যা একসাথে বহুমূখি কাজে ব্যবহার করা যায়। বড় আসবাব আপনার ঘরের বেশিরভাগ জায়গাই দখল করে রাখতে পারে তাই ঘরটি আবদ্ধ দেখাতে পারে।
যদি আসবাব বেছে নেয়ার স্বাধীনতা আপনার কাছে থাকে, তবে ফোল্ডেবল সোফা খুঁজুন যেটা বিছানা হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। দেয়ালের সাথে লাগানো ফোল্ডেবল টেবিল দেখুন, এমনকি অট্টোমান আনুন যা কিনা স্টোরেজ বাক্স হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। পুরো ব্যাপারটাই হচ্ছে বহুমূখী আসবাব ব্যাবহারে আপনার জায়গার কার্যকারিতা বাড়ানো। ঘর যখন প্রশস্ত হয় তখন এমনিতেই বরণীয় পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
২। স্টোরেজ সৃষ্টি করুন
অগোছালো ও এলোমেলো জায়গা এড়াতে, ও আপনার নির্দিষ্ট স্পেসটিকে যথাসম্ভব ব্যবহারের জন্য, নতুন নতুন উপায় বের করা খুব জরুরি। বিছানার নিচে রাখা স্টোরেজ বাক্স? পকেট অর্গানাইজার? একটার উপর আরেকটা রাখা যায় এমন খোপ খোপ বাক্স? ঝোলানো অর্গানাইজার? আপনার স্পেস কার্যকরভাবে ব্যবহার করার এগুলোতো গুটিকয়েক উপায় মাত্র। বাড়তি স্টো্রেজ সবসময় দরকার পরে, বিশেষ করে আপনি যখন ছাত্রাবাসে থাকেন। নাহলে আপনার জিনিসপত্র রাখা খুব কঠিন হয়ে পরে। তাছাড়া, আপনার যদি আলমারিতে জায়গা কম থাকে তবে ঝোলানো অর্গানাইজার অথবা হালকা পাতলা জালের বুনানির ড্রয়ার যেখানে নানান আকারের কম্পার্টমেন্ট থাকবে, এই ধরণের আসবাব যথেষ্ট স্টোরেজ সৃষ্টি করতে পারে।
৩। আলোকসজ্জা
অপর্যাপ্ত লাইটিং দেয়ালে কয়েক দড়ি ফেইরি লাইট ঝুলিয়ে দিন। অথবা একান্ত নিজস্বতা ফুটিয়ে তুলতে একটি নিওন সাইনও টানিয়ে দিতে পারেন। এ শুধু দেখতেই অপরুপ নয়, এটি আপনাকে মন ভালো করা পরিবেশ তৈরি করে দেবে। দেয়াল বাতি অথবা টেবিল ল্যাম্পও আপনার ঘরকে আলো ঝলমলে করে তুলতে পারে, এবং এগুলো বিশেষ করে লেখাপড়ার জন্য ফোকাস-লাইটিং এর চাহিদা পূরণ করে।
৪। আপনার ব্যক্তিত্ব তুলে ধরুন
আপনার ঘরটি যেন হয় আপনার ব্যক্তিত্বেরই প্রতিফলন। তাই আপনার প্রিয় উক্তি বা quotes গুলোর প্রিন্ট আউট বের করে ফেলুন, পোস্টার দিয়ে এমনকি ছবি দিয়েও আপনার দেয়াল সাজিয়ে তুলুন। এটি শুধু আপনার স্পেসকে আরও ব্যক্তিত্বসম্পন্নই করবে না, বরং এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি করবে যার সাথে আপনি একত্বতা অনুভব করবেন। তাছাড়াও আপনি আপনার নিজের তৈরি দেয়াল গ্যালারিও বানিয়ে ফেলতে পারেন যেখানে নানান ছবি ও ফ্রেম শোভা পাবে। আপনি টেপ দিয়ে দেয়ালে ছবি লাগাতে পারেন অথবা ধাতব ওয়াল র্যাক বা বুলেটিন বোর্ডের সাহায্যে আপনার শিল্পকর্ম কিংবা অমূল্য স্মৃতি জড়িত ছবি প্রদর্শন করতে পারেন। অপশন শেষ হবার নয়, অথচ এগুলোর কোনটি করতেই বেশি খরচ পড়েনা!
৫। দেয়ালগুলো ঢেকে দিন
হোস্টেলের ঘরগুলো পর্যায়ক্রমে মেরামত করা হয় এবং অনেক সময়ই দেয়ালগুলো একদম সাদামাটা হয় যা দেখতে হয়তো ভালো লাগেনা। অবশ্য এরকম দেয়ালে আভিজাত্য এনে দেবার সহজ কিছু উপায় আছে। প্রথমটি হলো রিমুভেবল ওয়ালপেপার লাগানো। ওয়ালপেপার বিভিন্ন রঙে ও বিভিন্ন ডিজাইনে পাওয়া যায়, এবং এগুলো আপনার আশপাশটা প্রাণবন্ত করে তুলতে পারে। এছাড়াও আপনি রঙিন টেপস্ট্রি বা ওয়াল ম্যাট টানিয়ে দিতে পারেন। এতে একইরকম কাজ হবে, তার সাথে আপনাকেও খুব শৈল্পিক দেখাবে!
৬। আরামপ্রদ করে তুলুন
আপনার হোস্টেল রুম ইউনিভার্সিটি জীবনে আপনার নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে কাজ করবে। তাই এটিকে যতটা সম্ভব আরামপ্রদ করার বিকল্প নেই। নতুন বেডিং, নরম বালিশ, কুশন, চাদর বা ব্লাংকেট প্রভৃতি কেনাকাটায় নিজেকে মাতিয়ে তুলুন। ঘরসজ্জায় ভিন্নমাত্রা আনতে কুশন, ব্লাংকেট যোগ করে দিন। একটা আরামপ্রদ গালিচা যোগ করে আপনার স্পেসটিকে আরো ব্যক্তিত্বসম্পন্ন করে তুলুন। অনেক খরচের ব্যাপার মনে হচ্ছে? আমরা এটাকে বিনিয়োগ বলছি!
৭। প্রকৃতির উপকরণ
ইনডোর পটের প্লান্ট দারুণ উপকরণ হিসেবে কাজ করে। আপনি বেঁছে নিতে পারেন সাকুলেন্ট, স্নেক প্ল্যান্ট, পাতাবাহার সহ অনেক কিছু। আপনার ডেস্কটি গাছের পট দিয়ে সাজিয়ে নিন। গাছ-গাছালী জানালার কাছে রাখুন, এমনকি গাছের পট সিলিং থেকেও ঝুলিয়ে দিতে পারেন। ইনডোর প্ল্যান্ট রক্ষণাবেক্ষণ করা সহজ, ঘরের বাতাসের মান উন্নত করে, সাথে আপনার স্পেস রঙিন করে তোলে।
৮। ডর্ম রুমে নিয়ে আসুন আপনার নীড়ের ছোঁয়া
ইউনিভার্সিটি খুব সম্ভবত প্রথমবার শিক্ষার্থীদের তাদের বাড়ি থেকে অনেক দিনের জন্য দূরে নিয়ে আসে। একা থাকা একটা বড় সিদ্ধান্ত, বিশেষ করে এমন জায়গায় যেখানে হয়তো আপনি কাউকে চেনেন না। তবে নতুন জায়গায় থাকছেন মানে তো এই নয় যে সব কিছুই নতুন হতে হবে।
এই পরিবর্তনের সময়টাতে, সাথে এমন কিছু থাকলে সুবিধা হয় যা কিনা আপনাকে বাড়ির কথা মনে করিয়ে দেবে। তা হতে পারে আপনার ছোটবেলার কাঁথা, তুলো ভরা প্লাশ টয়, পরিবারের একটি ছবি অথবা বন্ধুদের দেয়া কোন মোমেন্টো। যখনই বাড়ির কথা মনে করে কাতর হন, তখনই যেন আপনি ভালোবাসার পরশ পেতে পারেন।
বিশ্ববিদ্যালয় নিজেই একটি জীবন বদলে দেয়া অভিজ্ঞতা। এখানে আপনি নিজের কতশত দিক আবিষ্কার করেন এবং ব্যক্তি হিসেবে গড়ে ওঠেন। সেই দিক থেকে আপনার হোস্টেল রুম আপনার সর্বদা পরিবর্তনশীল ব্যক্তিত্বের প্রতিবিম্ব। হতে পারে এটা আয়তনে কেবল কিছু স্কয়ার ফিট, তবে এটাই আপনার বাড়ির বাইরে বাড়ি।
প্রফেশনাল ইন্টেরিওর ডিজাইন সহযোগীতা পেতে অথবা অনলাইনে ইন্টেরিওর ডিজাইন পরামর্শের জন্য, Sheraspace এর সাথে যোগাযোগ করুন, আজই!
এই ব্লগটি English এ পড়ুন।
অনুবাদ: ডাঃ অধরা মাধুরী ওয়াদুদ
No Comments