মেঝেতে পাতার গালিচা বা রাগস আপনার ঘরের সৌন্দর্যে নিয়ে আসতে পারে নতুনত্ব এবং গালিচাটি যে উপাদান দিয়ে তৈরি সেটিও ঘরের সৌন্দর্যে ভূমিকা রাখে। এটি আপনার ঘরে থাকা আসবাবপত্রের সৌন্দর্যও ফুটিয়ে তুলতে সাহায্য করে। রাগস বা গালিচা শুধুমাত্র আপনার ঘরের মেঝেকেই আবৃত্ত করে রাখে না বরং এর মাধ্যমে ঘরকে নান্দনিকতাও ফুটিয়ে তোলা যায়।
ঘরের বিভিন্ন বিষয় মাথায় রেখে সঠিক রাগ বা গালিচাটি নির্বাচন করা আপনার জন্য কিছুটা বিভ্রান্তিকর মনে হতে পারে।
তাই আজ এই ব্লগটিতে আমরা রাগ বা গালিচার কয়েকটি ধরন সম্পর্কে জানব।
স্যাগি রাগস বা গালিচা
নুডলস এর মতো আকার এবং এলোমেলো ঝুল বিশিষ্ট হওয়ায় এই ধরনের রাগসগুলো অন্যান্য রাগস বা গালিচার তুলনায় কিছুটা লম্বা দেখায়। আর লম্বাটে এই তন্তুর কারণে এগুলোকে বেশ থলথলে বা এলোমেলোও মনে হয়, যার কারণেই এর নাম “স্যাগি”।
এই ধরনের স্যাগি রাগস দারুণভাবে ফ্লোরে মানিয়ে যায়। বিশেষ করে শীতের সময় কার্পেট অথবা কাঠের ফ্লোরবোর্ড এর জন্য এটি বিশেষভাবে উপযোগী- আর লিভিং রুমে আরাম করে শুয়ে বসে রাত কাটানোর জন্যও এটি খুবই দারুণ।
এই ধরনের স্যাগি রাগসের জন্য সবচেয়ে উপযোগী উপাদান হচ্ছে উল বা পশম। কারণ, উল হচ্ছে হাইপোঅ্যালার্জেনিক, পরিবেশ বান্ধব এবং অগ্নি-প্রতিরোধী, তাই স্যাগি রাগসের জন্য এটি অন্যতম সেরা উপাদান।
এর লম্বাটে ধরনের পশমী তন্তু আমাদের পায়ের আরামেও প্রভাব ফেলে, আর এই স্যাগি রাগসগুলো বাসা কিংবা অফিসের শব্দ কমাতেও সাহায্য করে।
জুট রাগ
পাটের তৈরি উদ্ভিজ্জ তন্তু থেকে তৈরি করা হয় জুট রাগ বা জুটের গালিচা। পাটের আঁশ বা ফাইবারগুলোকে পছন্দ অনুযায়ী নকশার উপর ভিত্তি করে গিঁট এবং বুননের মাধ্যমে এই জুট রাগ তৈরি করা হয়। সম্পূর্ণ গালিচাটির বুনট নির্ভর করে এর বিনুনি এবং গিঁট দেয়ার ওপর।
শক্তপোক্ত বুনন, তাপ নিরোধক বৈশিষ্ট্য, শোষণ ক্ষমতা এবং এর শক্ত টেক্সচারের কারণে এটি সহজেই পরিষ্কার করা যায়, তাই এটি গালিচা বা রাগস হিসবে চমৎকার। এই জুট রাগসগুলো চিরাচরিত উপায়ে পরিষ্কার করা ছাড়াও ভ্যাকুয়ামের সাহায্যেও পরিষ্কার করা যায়।
হাতে বোনা পাটের তৈরি এই গালিচাগুল ঘরে একটি স্টাইলিশ এবং একই সাথে গ্রামীণ আবহ তৈরি করে। এই জুট রাগসগুলো হাতে বোনা হয়। আর নিখুঁত বুনটের কারণে রঙিন এবং নকশাযুক্ত গালিচার তৈরির প্রাথমিক ভিত্তি হিসেবেও এগুলো দারুণ জনপ্রিয়।
আমাদের দেশে পাট একটি সহজলভ্য এবং দ্রুত বর্ধনশীল তন্তু হিসেবে পরিচিত এবং এর উৎপাদনে প্রকৃতিতে কোনো বিরুপ প্রতিক্রিয়া পড়েনা। তাই এই পরিবেশবান্ধব পাটের তৈরি গালিচাগুলো দামী মেশিনে তৈরি গালিচাগুলোর বিপরীতে দারুণ এক বিকল্প হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। এগুলো পুনঃব্যবহারযোগ্য এবং বায়োগ্রেডেবল, তাই আপনি আপনার ঘরের সাজে পরিবর্তন আনতে চান তবে খুব সহজেই এইগুলোকে পুনঃব্যবহার করতে পারবেন।
পার্সিয়ান/ অরিয়েন্টাল রাগ
অরিয়েন্টাল রাগস/গালিচা হলো হাতে বোনা বিশেষ ধরনের কার্পেট বা গালিচা যা শুধুমাত্র এশিয়াতে বর্তমান চীন, ইরান, ভারত, পাকিস্তান, তিব্বত, নেপাল, তুর্কী এমনকি রাশিয়াতেও বোনা হয়ে থাকে। পার্সিয়ান গালিচাগুলোও হাতে বোনা হয়, কিন্তু আসল পার্সিয়ান গালিচা ইরানে তৈরি করা হয়ে থাকে।
পার্সিয়ান এবং অরিয়েন্টাল গালিচাগুলো সাধারণত মডার্ন গালিচাগুলো থেকে অধিক যত্ন সহকারে তৈরি করা হয়ে থাকে। এগুলো শুধুমাত্র ঘরে দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারের জন্যই লাভজনক নয়, বরং সময়ের সাথে এদের কদর বেড়েই চলে, আর একই সাথে ঘরে এই ধরনের অনন্য জিনিসের ব্যবহার ঘরের সৌন্দর্যকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়।
একটি পার্সিয়ান কার্পেট আপনার ইন্টেরিওরে বড় একটি ভূমিকা রাখতে পারে। ঘরের ডাইনিং এ রাখা একটি ট্রেডিশনাল পার্সিয়ান কার্পেট খুব সুন্দরভাবে ঘরের আবহে বাড়তি সৌন্দর্য যোগ করে। অরিয়েন্টাল এবং পার্সিয়ান এই কার্পেটগুলো আপনার ঘরের নান্দনিকতাকে বাড়িয়ে তুলতে দারুণ উপযোগী।
শতরঞ্জি
শতরঞ্জি হচ্ছে আমাদের দেশে রংপুরের স্থানীয় এক ধরনের ফ্লোর ম্যাট বা মাদুর শ্রেণীর গালিচা। এই শতরঞ্জিগুলোর রঙ এবং ডিজাইন খুবই দারুণ। এগুলো সহজেই ধোয়া যায় এবং দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহারের জন্যও উপযোগী.
শতরঞ্জির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এদের ট্রেডিশনাল নকশা এবং ভিন্টেজ রঙের ব্যবহার, যা ঘরের যেকোনো সাজের সাথে খুব সুন্দর ভাবে মানিয়ে যায় এবং ঘরের মেঝে বা বেডরুমে এনে দেয় অনন্য এক ঐতিহ্যবাহী ছোঁয়া।
শতরঞ্জি এমন এক ধরনের মাদুর বা গালিচা যা ঘর সাজানোর একটি ফ্যাশনেবল উপাদান হিসবে এখন বিবেচনা করা হয় এবং একই সাথে তীব্র শীতে ফ্লোরিং এর অংশ হিসবে গ্রাম বাংলায় ব্যবহার হয়ে আসছে। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে শতরঞ্জি হচ্ছে একটি আভিজাত্যের প্রতীক।
দেশীয় ধাঁচ এবং আভিজাত্যের ছোঁয়া- এই দুই মিলিয়েই শতরঞ্জি আপনার ঘরের সৌন্দর্যকে বহুগুণে বাড়িয়ে তুলবে নিমিষেই।
এনিমেল হাইড
হাইড রাগ হচ্ছে মূলত পশুর চামড়া, যা ক্রোম ট্যানড বা ভেজিটেবল ট্যানড- এই দুইটি উপায়ে সংরক্ষণ করা হয় হয়ে থাকে। হাইড রাগসগুলোতেও অন্যান্য চামড়ার পণ্যের মতো কিছু দাগ বা চিহ্ন থাকতে পারে। এই রাগসগুলো নরম, দীর্ঘস্থায়ী এবং টেকসই।
এনিমেল হাইড রাগসগুলো ঘরের লিভিং স্পেসকে আধুনিক সাজে সাজিয়ে তোলে। শুধুমাত্র এনিমেল হাইড ব্যবহার করে অথবা অন্য গালিচার ওপর এটি ব্যবহারের মাধ্যমে ঘরে কন্টেম্পোরারি লুক নিয়ে আসা যায়। এই ধরনের গালিচাগুলো বিভিন্ন রঙ, স্টাইল এবং আকারের হয়ে থাকে। এগুলো হতে পারে পশুর চামড়ার আকৃতির কিংবা গতানুগতিক চারকোণা আকৃতির।
এনিমেল হাইড গালিচাগুলোতে প্রাকৃতিকভাবে একটি চকচকে ভাব আছে, এটি খুবই নরম এবং এটিকে যথাযথভাবে ট্যানড করা হলে এটিতে কোন ধরনের গন্ধ অবশিষ্ট থাকেনা। এই গালিচাগুলো ঘরে আভিজাত্যপূর্ণ ছোঁয়া নিয়ে আসে।
ঘরের জন্য সঠিক কার্পেট অথবা গালিচা বাছাই করা কঠিন কোনো ব্যাপার নয়, আবার নিজ থেকে সহজেই সেরাটা খুঁজে বাছাই করতে জানতে হবে এমনটিও নয়।
ঘরের যেকোনো ইন্টেরিয়র সম্পর্কে প্রফেশনালদের পরামর্শ পেতে যোগাযোগ করুন Sheraspace-এ অথবা ব্রাউজ করুন Online Interior Design Consultation-এ।
এই ব্লগটি ইংরেজিতে পড়ুন।
অনুবাদ: জান্নাতুল তাজরিয়া ফারসি
No Comments