করোনাভাইরাস (COVID-19) মহামারী হিসাবে আবির্ভাব হওয়ার সাথে সাথেই সবাইকে নিজ নিজ বাড়ীতে থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তবে সংক্রামক জীবাণু আপনার বাড়িতেও প্রবেশ করতে পারে। সুতরাং নিজেকে পৃথক করে রাখার পাশাপাশি, আপনার ঘরটি নিয়মিতভাবে পরিষ্কার এবং পরিপাটি রাখা জরুরী।
এই নিবন্ধে আমরা আপনার বাসা জীবাণুমুক্ত করতে এবং অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস করতে সহায়তা করার জন্য কিছু টিপস প্রদান করেছি।
গ্লাভস পরিধান করুন
নিজের বাসা পরিষ্কার করা বা নোংরা কাপড়চোপড় ধরার আগে গ্লাভস পরিধান নিশ্চিত করুন। সেক্ষেত্রে একবার ব্যবহার করেই ফেলে দেয়া যাবে (ওয়ান-টাইম-ইউজ) এমন গ্লাভস ব্যবহার করা ভালো। যদি আপনি ওয়ান-টাইম-ইউজ গ্লাভস ব্যবহার না-ই করতে পারেন, তাহলে অন্তত প্রত্যেকটি কাজের জন্যে আলাদা গ্লাভসের জোড়া ব্যবহার করুন। গ্লাভস খুলে রাখার সাথে সাথেই হাত ধুতে কিন্তু একেবারেই ভুলবেন না!
বারবার স্পর্শ করা হয় এমন জায়গাগুলি জীবাণুমুক্ত করুন
আমরা যতবারই আমাদের হাত পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত রাখার চেষ্টা করি না কেন, যদি যেসব স্থান আমরা বারবার স্পর্শ করি সেখানেই জীবাণু থেকে যায় তাহলে আমাদের নিজেদের পরিষ্কার রাখার সম্পূর্ণ প্রচেষ্টাই বৃথা হয়ে যাবে। এমনকি দেখতে সবচাইতে পরিষ্কার মনে হয় এমন জায়গাগুলোও অসুস্থতা সৃষ্টিকারি জীবাণুদের আবাসস্থল হতে পারে। সুতরাং, আমরা বারবার যেই জায়গাগুলো স্পর্শ করি, তা জীবাণুমুক্ত রাখা জরুরী। এমন স্থানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্থানগুলো হচ্ছে –
• দরজার হাতল
• ওয়াশরুমের কল এবং শাওয়ারের বা ফ্লাশের বোতাম
• লাইট সুইচ
• রান্নাঘরের কাউন্টার ও আসবাবপত্র
• ময়লা কাপড় জমানোর / ধোবার বালতি
• রিমোট কন্ট্রোল
ভালো ফলাফলের জন্য জীবাণুমুক্ত করার আগে ডিটারজেন্ট বা সাবান এবং পানির মিশ্রণ দিয়ে পৃষ্ঠটি ধুয়ে ফেলা বাঞ্ছনীয়। জীবাণুনাশককে কয়েক সেকেন্ডের জন্য যে পৃষ্ঠ পরিষ্কার করছেন তার উপরে ছিটিয়ে রেখে শুকিয়ে যাওয়ার আগে মুছে ফেলুন।
আপনি যদি প্রয়োজনীয় এবং তালিকাভুক্ত জীবাণুনাশক দোকানে না পেয়ে থাকেন, একেবারেই আতঙ্কিত হবেন না! এক গ্যালন শীতল পানির সাথে এক চতুর্থাংশ (১/৪ র্থ) কাপে ক্লোরিন ব্লিচ মিশিয়ে আপনি নিজেই ঘরোয়া পদ্ধতিতে জীবাণুনাশক তৈরি করতে পারেন।
আপনার বাসার মেঝে যদি কাঠের হয়ে থাকে তবে সেক্ষেত্রে ব্লিচ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন এবং এর পরিবর্তে ভিনেগার এবং পানির মিশ্রণ ব্যবহার করুন।
নরম পৃষ্ঠগুলোকেও জীবাণুমুক্ত রাখুন
যদিও সোফা, পর্দা, কার্পেটের মতো নরম পৃষ্ঠগুলি ধোয়া যায়, তবে এসব ঘন-ঘন ধুয়ে পরিষ্কার এবং ইস্ত্রী করা একপ্রকারে অসম্ভব। সুতরাং, এগুলি জীবাণুনাশক স্প্রে দিয়ে নিয়মিত স্প্রে করুন।
প্রতিদিন তোয়ালে পরিবর্তন করুন
হাত মোছা বা গোসল যেই কাজের তোয়ালেই হোক না কেন, একই তোয়ালে প্রতিদিন ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন এবং এগুলি নিয়মিত প্রতিস্থাপন করুন। এক বার ব্যবহার করেই ফেলে দেয়া যায় এমন ধরনের তোয়ালে সম্ভাব্য সবখানে ব্যবহার করা ভালো।
বাতাস বিশুদ্ধকারী যন্ত্র (এয়ার পিউরিফায়ার) ব্যবহার করুন
অনেক বায়ু বিশোধক বা ফিল্টাররেরই বায়ু থেকে জীবাণু ধ্বংস করার ক্ষমতা আছে বলে দাবী করা হয়। তাই এই ধরনের বায়ু বিশোধনকারী যন্ত্রে বিনিয়োগ আপনার জন্যে উপকারি প্রমাণ হতে পারে। তবে যাই হোক, এটিকে বাসা পরিষ্কারের বিকল্প হিসেবে কোনভাবেই দেখা উচিত নয়।
আপনার মুঠোফোনটি পরিচ্ছন্ন রাখুন
যেহেতু আপনার ফোনটি আপনি সারাদিনই অবিচ্ছিন্নভাবে ব্যবহার করে থাকেন, তাই যত বেশি বেশি সম্ভব এটি পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জীবাণুনাশক ওয়াইপের সাহায্যে আপনি আপনার ফোন বারবার মুছে এটিকে জীবাণুমুক্ত রাখতে পারেন। বিকল্পস্বরূপ আপনি একটি পরিষ্কার কাপড় এবং অ্যালকোহল-ভিত্তিক রাব বা জেলও ব্যবহার করতে পারেন।
সর্বোপরি, এই পরিস্থিতে স্যানিটাইজেশন এবং সঠিক স্বাস্থ্য-যত্নের ব্যবস্থা গ্রহণ অবশ্যই সবচাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই নিবন্ধে আলোচনা করা টিপসগুলি আপনার ঘর পরিষ্কারে আপনাকে সহায়তা করবে। এবং যদিও সম্পূর্ণভাবে সম্ভব নয়, তবুও আমরা আশা করি যে এই টিপসগুলির বাস্তবায়ন আপনাকে করোনাভাইরাসের এই দুর্যোগকালে স্বাস্থ্যকর এবং সুরক্ষিত রাখতে সহায়তা করবে।
এই ব্লগ টি English এ পড়ুন
অনুবাদ: নাজিয়া বিনতে শফিক
No Comments