একটি মনোমুগ্ধকর অফিসের পরিবেশ আমূল পরিবর্তন আনতে সক্ষম! দিনের শুরুতে ঘুম থেকে উঠেই যদি অফিসে যেতে ইচ্ছে করে, তাহলে সেটা যেকোন ব্যাক্তির জন্যই মঙ্গলময়; মনের অজান্তে হলেও। নিজের কাজ ও কাজের জায়গাটিকে ভালোবাসতে পারার গুরুত্বকে কোন ভাবেই অস্বীকার করা যায়না। তবে, একটি বিলাসবহুল অন্দরসজ্জার একমাত্র অসুবিধা হচ্ছে এর খরচ। এটি ছোট ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান, স্টার্ট আপ, এমনকি সীমিত বাজেটে পরিচালিত কোন প্রতিষ্ঠিত সংস্থার ক্ষেত্রেও দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে। ভাবনা নেই! আমাদের অফিস সাজানোর সাশ্রয়ী উপায়গুলো অবশ্যই আপনাকে সেভাবেই অফিস সাজাতে সাহায্য করবে ঠিক যেভাবে আপনি চান। এবং সেটাও হবে আপনার পুঁজি-সঞ্চয় সাবাড় না করেই! আমাদের সাথে ঘুরে দেখুন সাশ্রয়ী উপায়ে অফিস সজ্জার বিভিন্ন দিক।
এমন বাজেট নির্ধারণ করুন যেন সেটি আপনাকে পরিচালিত করে
আপনার প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হবে বাজেট নির্ধারণ করা, যেন আপনি ঠিক করতে পারেন কোন খাঁতে আপনি কত খরচ করবেন। আপনার কাছে যা আছে সেগুলোর তালিকা করুন, এবং একই সাথে আরেকটা লিস্টে টুকে নিন আপনি আর কি কি যোগ করতে চান। এটি করার সময় মাথায় রাখবেন যে অনেক পুরানো জিনিসই আপনি নতুন ভাবে ব্যবহার করতে পারেন।যেমন পুরানো সুন্দর মগ অথবা কাঁচের বোতলকে যথাক্রমে কলমদানি ও ফুলদানী হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এভাবেই অপ্রয়োজনীয় জিনিস না কিনে খরচ কমাতে পারেন । আপনি যখন সীমিত বাজেটে কাজ করবেন তখন আপনার মূলমন্ত্র হওয়া উচিৎ ‘কমই হচ্ছে বেশি’।
দেয়ালে রঙ করুন
গবেষণায় দেখা গেছে কিছু নির্দিষ্ট রং একজন ব্যাক্তির কর্মক্ষমতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। আমরা মানুষেরা আমাদের মনের কাছে বন্দি। আমাদের মন যত ভালো থাকে আমরা তত সৃষ্টিশীল ও কর্মক্ষম হই। একজন চাকরিদাতার চেষ্টা থাকে কর্মীদের মনোবল সবসময়ই দৃঢ় করার। এটি শুরু হতে পারে সবচেয়ে সরল ধাপগুলো থেকে। এই যেমন মনোমুগ্ধকর একটা পরিবেশের জন্য দেয়ালটিকে রাঙিয়ে তোলা। অফিস ইন্টেরিওর নতুন করে সাজিয়ে তোলার জন্য দেয়াল রঙ করা একটি সাশ্রয়ী উপায়।
নূন্যতম শৈলির আসবাব ব্যবহার করুন
প্রায় সবাই নিশ্চই একমত হবেন, কাজের পরিবেশকে সিম্পল রাখাটাই সবচেয়ে ভালো পন্থা। দ্রুততার সাথে এগিয়ে যাওয়া আজকের দুনিয়ার সাথে খাপ খাইয়ে একটি আধুনিক অফিস গড়ে তুলতে খেয়াল রাখা জরুরি যেন আপনার কাজের জায়গাটি অতিরিক্ত জিনিসে ঠাসা না হয়। মিনিমালিস্টিক পন্থায় মসৃণ ও হাল্কা-পাতলা আসবাবের ব্যবহার আপনার অফিসে একটি বিলাসবহুল ভাব এনে দেবে। মিনিমালিস্টিক আসবাবের দামও তুলনামূলকভাবে কম।
কার্যকরী অন্দরসজ্জার ব্যবহার
কর্মস্থলের মত পেশাদার একটি এরিয়া সাজাতে প্রয়োজনীয় জিনিসকে গুরুত্ব দেয়া জরুরি। অপ্রয়োজনীয় জিনিস এড়িয়ে চলতে হবে, কারণ কাজের জায়গাটি অপ্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে ঠেসে ফেলা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। সেজন্যই আমরা শুধু সেসব জিনিসই ব্যবহার করবো যেসব জায়গা বাঁচাবে এবং এর সাথে দেখতেও রুচিশীল হবে। যেমন আমরা ডেস্ক এরিয়ার পাশে দেয়ালে ক্যাবিনেট যোগ করতে পারি এবং এখানে ফাইল রাখার জন্য বিন দিয়ে সাজাতে পারি। এতে আপনার ডেস্কটিও জঞ্জালমুক্ত হবে।
মেটালের স্প্রে করা র্যাকে আমাদের কাগজপত্রগুলো স্টোর করা যেতে পারে। এতে একটি নান্দনিক সৌন্দর্য ফুটে উঠবে। এই ক্যবিনেটগুলোকে আরো সুসজ্জিত করুন উপরে ছোট গাছ অথবা ফ্রেম করা মোটিভেশনাল উদ্ধৃতি রেখে। এই দুটোই একটি সুস্থ কাজের পরিবেশ তৈরিতে ভূমিকা রাখে। মাথার উপরের যেসব তাক আছে, সেগুলো এতই উঁচু হয় যে সাধারণত অফিসের জিনিসিপত্র রাখার জন্য উপযোগী হয়না। এগুলো সাজাতে পারেন নান্দনিক ছবি দিয়ে। এই উপায়গুলো খরচ কমিয়ে আনে, এবং বাজেটের ভেতরে থেকেই অফিসকে একটি সজীব চেহারা দেয়।
রিসেপশন এরিয়া ছোট করে আনুন
আপনার হয়তো রিসেপশন এরিয়ার পেছনে টাকা খরচ করতে দ্বিধা বোধ হতে পারে। আজকাল অফিসগুলো টেকনোলজিতে যতটা এগিয়ে, সেটা আমলে নিলে ভাবনা হতেই পারে – আমাদের কি সত্যিই বিশাল একটা রিসেপশন ডেস্কের দরকার আছে, নাকি এখানে সুন্দরভাবে কাটছাঁট করা যেতে পারে? আজকালকার ক্যাজুয়াল, আধুনিক অফিসে, রেসেপশন এরিয়াতে কাটছাঁট করা গেলে খরচ ও জায়গা দুটোই বাঁচানো যায়। অন্যদিকে এই জায়গাটি আরো কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যায়। তবে, যেসব ব্যবসায় ক্লায়েন্টদের আসার ব্যাপার থাকে, অথবা ব্যাক্তিগত সেবা প্রদানের ব্যাপার থাকে, সেখানে প্রচলিত রিসেপশন ডেস্ক ব্যবহার করাই যাথাযোগ্য।
পর্যাপ্ত পরিমানে স্টোরেজ রাখুন
ঘরসজ্জা যতই সুন্দর হোক না কেন, কোন ভাবেই একটি অগোছালো অফিস দেখতে সুন্দর লাগবে না। মাঝেমাঝে পেশাগত জীবন যতই অগোছালো লাগুক না কেন, অফিসে জঞ্জাল না জমতে দিয়ে ও অফিসকে পরিপাটি রেখে, ব্যাপারটিকে কার্পেটের নিচে ঝাড়ু দেয়ার মতই আড়াল রাখা যায়। এমনটা করার জন্য পর্যাপ্ত স্টোরেজ ক্যাবিনেট যোগ করতে হবে যেন ফাইল অথবা কাগজপত্র এখানে সেখানে পরে না থাকে। আপনার ক্যাবল ও কর্ডের জন্য ওয়ায়ার(wire) অর্গানাইজার ব্যবহার করে, ও কিউট দেখতে ছোট মগ বা কাপকে কালমদানি হিসেবে ব্যবহার করে আপনি আপনার ডেস্ক পরিপাটি রাখতে পারেন। এতে খরচও বাচে। ছোট ছোট জিনিস যেমন পেপার ক্লিপ, স্টেপল, হাইলাইটার ইত্যাদি রাখার জন্য ছোট ডেস্ক অর্গানাইজারের পেছনে খরচ করাটাও একটা বুদ্ধিদীপ্ত কাজ।
একটি পরিপাটি কাজের জায়গা যেকোন অভিনব অন্দরসজ্জার পেছনে অতিরিক্ত খরচ করা থেকে আমাদের বাঁচিয়ে দেয়। আমরা ডেকোরের ব্যাপারে রাজকীয় না হয়েও একটি সরল ও মিনিমালিস্টক অফিস পেতে পারি।
সবুজ গাছপালা ব্যবহার করুন
বাহিরকে ভেতরে নিয়ে আসলে শুধু ঘরসজ্জাই হয়না, এর সাথে আপনাআপনিই একটি পরিচ্ছন্ন পরিবেশের সৃষ্টি হয় – বাতাস দূষণমুক্ত হয় ও পুরো আবহের উন্নতি হয়। তাছাড়াও এটি সুপ্রতিষ্ঠিত যে প্রাকৃতিক পরিবেশ সৃজনশীলতা ও মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে। টবের গাছ হোক অথবা ছোট ডেস্ক প্ল্যান্ট, এগুলো অফিস সজ্জার সাশ্রয়ী অথচ অমূল্য অংশ।
দিনের এক তৃতীয়াংশই যেহেতু কর্মক্ষেত্রে কাটে, জায়গাটিকে আরামপ্রদ ও চোখের জন্য স্বস্থিকর গুরুত্বপূর্ণ। এমন হলে চ্যালেঞ্জিং কাজগুলোও উপভোগ্য হয়ে যায়। আপনার অফিসটি মেরামত করুন আর নতুন করে গড়ুন, এগুলো ছিলো কিছু সাশ্রয়ী উপায় যার ব্যবহারে আপনি এমন একটি অফিস স্পেস পেতে পারেন যাকে ভালবাসবে কর্মচারী, অতিথি, ক্লায়েন্ট এবং আপনি!
প্রফেশনাল ইন্টেরিওর ডিজাইন সহযোগীতা পেতে অথবা অনলাইনে ইন্টেরিওর ডিজাইন পরামর্শের জন্য, আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন Sheraspace এ!
এই ব্লগটি English এ পড়ুন।
অনুবাদ: ডাঃ অধরা মাধুরী ওয়াদুদ
No Comments