চলে এলো অনেক প্রত্যাশার সেই পহেলা ফাল্গুন। কনকনে শীতের আবেশ থেকে বেরিয়ে মানুষ এখন বসন্ত উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর তার শুরুটা হয় পহেলা ফাল্গুন দিয়ে। বাঙালি জাতি উৎসবপ্রিয় জাতি। আর নানান বৈচিত্র্য নিয়ে আসা একেকবার একেক ঋতুকে সাদরে বরণ করে নেয়ার ব্যাপারে আমাদের বাঙালিদের জুড়ি নেই, যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এই বসন্ত। বসন্তের সময় চারিদিকে সবুজের সমারোহে ঢেকে যায় পথঘাট, দক্ষিণা বাতাসে প্রাণ যায় জুড়ে। যেদিকেই চোখ যায় সেদিকে শুধু রঙের খেলা। তাই আপনিও মেতে উঠতে পারেন এই রঙের খেলায়, আর তার শুরুটা হতে পারে আপনার ঘর থেকেই।
বাঙালি হিসেবে আমরা জানি কিভাবে উৎসব উদযাপন করতে হয়। তাই এই পহেলা ফাল্গুনে আপনার ঘরের ইন্টেরিয়র ডিজাইনে কিভাবে ফাল্গুনের ছোঁয়া আনবেন, সেটাই আজকের ব্লগে আমাদের আলোচনার বিষয়। আশা করি এই ব্লগটি আপনাকে আপনার মনের মত ঘর রাঙাতে সাহায্য করবে।
বড় ফুলদানিতে ফ্রেশ বা সতেজ ফুল
আপনার সকালটা যদি এমন ভাবে শুরু হয় যে সকালে ঘুম থেকে উঠে আপনি এক কাপ চা হাতে নিয়ে পুরো বাড়ির ভেতর হাঁটছেন আর চারপাশে বিভিন্ন রঙের ফুলের সৌন্দর্য আর সুঘ্রাণে আপনি বিমোহিত হচ্ছেন! কি সুন্দর দিনের শুরু – তাই না? বসন্তের দিনে আপনি যদি আপনার বাসায় ফাল্গুনের আবহ তৈরি করতে চান তবে অবশ্যই আপনাকে বেশি বেশি ফুলের ব্যবহার করতে হবে। আপনার ঘরের কাঁচ বা সিরামিকের ফুলদানিতে চম্পা, চামেলি, শিউলি, টগরফুল, রজনীগন্ধা, কদম্ব ছাড়াও বিভিন্ন রঙের গোলাপ (লাল, কমলা, হলুদ ইত্যাদি) ফুল দিয়ে পূর্ণ করুন। বিষয়টা শুধু যে ফুল তা নয়, এই সুন্দর ফুলগুলি যেটিতে থাকবে সেটিও একটি বড় বিষয় – অর্থাৎ ফুলদানি। আপনি কারুকার্যপূর্ণ এবং রুচিসম্মত ফুলদানি ব্যবহার করতে পারেন – এটির একটি আলাদা সৌন্দর্য আছে। বসন্ত চলে গেলেও আপনি এইসব ফুলদানি ব্যবহার করতে পারবেন।
দেয়াল সাজানোর উপকরণ
আপনার ঘরের ইন্টেরিয়র ডিজাইনকে যদি আপনি আরও ঐতিহ্যবাহী করে তুলতে চান, তাহলে আপনি আপনার ঘরের দেয়ালে পাট বা বেতের তৈরি ঝুড়ি ব্যবহার করতে পারেন। এতে আপনার ঘরকে শুধু ট্রেডিশনাল (ঐতিহ্যবাহী) ই মনে হবে না, দেশীয় উপকরণ দিয়ে তৈরি এই ঝুড়িগুলো আপনার ঘরের সৌন্দর্যকেও বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে।
রঙের ব্যবহার
বসন্ত মানেই উজ্জ্বল ও গাঢ় রঙের খেলা। অর্থাৎ বসন্তে সবসময় যেকোনো কিছুতে অনেক উজ্জ্বল এবং বোল্ড রঙ ব্যবহার করা হয়। আপনি যদি আপনার ঘরের পর্দাকে বাসন্তী সাজে পরিবর্তন করতে চান তাহলে আপনার উজ্জ্বল রঙের পর্দা ব্যবহার করা উচিত যা বসন্তের বর্তমান ট্রেন্ডের সাথে মানানসই। আর আপনি যদি একটু বোল্ড রঙের পর্দা ব্যবহার করেন তাহলে ঘরের অন্যান্য সব কিছুর রঙ হালকা ও অনুজ্জ্বল রাখুন। এত করে আপনার ঘরের অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জায় একটি শান্ত এবং সুগঠিত ধরণ আসবে।
আপনার ঘরে বসন্তের ছোঁয়া আরও বৃদ্ধি করার জন্য আপনি আপনার সোফা এবং কুশনে পরিবর্তন আনতে পারেন। হলুদ রঙের প্যাটার্ন করা কুশন আপনার ঘরের সৌন্দর্যে বসন্তের আবেশ এনে দেবে। তাছাড়াও আপনি যদি শীতের একটা আবেশ আনতে চান তবে হলুদ বা গাঢ় কমলা কালারের চাদর যেকোনো সোফা বা বিছানার উপর শুইয়ে রাখতে পারেন। হলুদ কিংবা পোড়াটে কমলা রঙের চাদরগুলো সাধারণত হালকা রঙের সোফাতে ভাল লাগে।
বসন্তের রঙ বলতে শুধুই যে হলুদ বোঝায় তা নয়। বেগুনি এবং আকাশী-নীল ধরনের রঙও ডিজাইনারদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছে। মূল বিষয়টা কোন রঙ ব্যবহার করবেন, এটা না। মূল বিষয়টা হলো আপনি আপনার ঘরের ভেতরের সাজসজ্জায় কতটুকু প্রাণ দিতে পারছেন। প্রকৃতিতেও বসন্ত ঠিক তাই – নতুন প্রাণের আগমন।
আপনারা যারা বোল্ড রঙ পছন্দ করেন না, তাদেরও ভয়ের কিছু নেই। প্যাস্টেল শেড গুলোও আপনার ঘরের জন্য অত্যন্ত সুন্দর ও প্রশংসাযোগ্য হবে। এটি আপনার ঘরে একটি স্বস্তিদায়ক পরিবেশ এনে দিবে।
আপনি যদি আপনার ঘরের সৌন্দর্যকে আরেক ধাপ এগিয়ে নিতে চান তবে আপনি বোটানিক্যাল প্রিন্টের রিমুভেবল ওয়ালপেপার ব্যবহার করতে পারেন, আপনি চাইলে সেটি বসন্তের শেষে উঠিয়ে ফেলতে পারবেন।
শীতকে বিদায় জানানোর আয়োজন
এখন সময় এসে গেছে শীতের ভারী কম্বল এবং বেডশীট উঠিয়ে ফেলার আর তার জায়গায় পাতলা বেডশীট ব্যবহার করার।
বসন্তের জন্য সব থেকে উপযুক্ত হচ্ছে ‘বাটিক’ এর বেডশীট। ইতোমধ্যেই এটির জনপ্রিয়তা এখন সবথেকে বেশি। আর আমাদের বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে বর্তমানে বাটিকের ব্যবহার ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে। এটির ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি আপনার ঘরে একটি পারফেক্ট সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। তাছাড়াও আপনি আপনার বিছানাকে নকশীকাঁথা দিয়েও সাজাতে পারেন। সুন্দর কারুকার্যখোচিত নকশি কাঁথার বেডশীট এবং ব্লক প্যাটার্নের কুশন আপনাকে পুরোপুরি গ্রামবাংলার ছোঁয়া এনে দিবে। বসন্তকে আলিঙ্গন করার জন্য এর থেকে সুন্দর উপকরণ আপনি আর পাবেন না।
আপনি আপনার ঘরের কোণাগুলো সবুজ গাছ/চারাগাছের মাধ্যমে পরিপূর্ণ করতে পারেন যেহেতু বসন্ত মানেই সবুজের সমারোহ। গাছের জন্য মেঝের উপর বড় টব বা টেবিলের উপর ছোট টব বা উভয়টিই আপনি ব্যবহার করতে পারেন। এই টবে আপনি যেকোনো ধরনের চারাগাছ যেমন: areca, money-plant, snake plant, dracaena, and aloe vera লাগাতে পারেন। এই সবগুলোই আমাদের বাংলাদেশের আবহাওয়ার সাথে মানানসই। এগুলা যে শুধু আপনার ঘরের অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে তাই-ই নয়, আপনার ঘরের মধ্যে পরিশুদ্ধ বাতাস বা অক্সিজেন সরবরাহ করবে।
ডাইনিং টেবিলে ফাল্গুনের ছোঁয়া
আপনি আপনার ডাইনিং টেবিল যতটা বাঙালি উপকরণ দিয়ে ডেকোরেশন করতে পারেন, করার চেষ্টা করুন, এতে আপনাতেই বসন্তের আবেশ আসবে। এছাড়া বসন্তের এই সময়টায় ডাইনিং টেবিলে পোড়ামাটির বাসন ব্যবহার করা সবথেকে উপযুক্ত। ভেতরে সাদা গ্লেজের পোড়ামাটির গ্লাস বা বাসন আপনার টেবিলের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিবে। আর টেবিলের পাশে বেসিনের জায়গায় থাকবে ব্লক প্রিন্টের ফেব্রিকের তোয়ালে। এতে আপনার ঘরের অন্যান্য কোণার মত টেবিলেও বসন্তের পুরোপুরি আমেজ চলে আসবে।
আশা করি এই ব্লগটি আপনাদের নিজেদের ঘরের অভ্যন্তরীণ সাজের সাথে ফাল্গুনের সংমিশ্রণকে ফুটিয়ে তোলার ব্যাপারে আগ্রহী করবে। Interior Design এ যেকোনো প্রোফেশনাল সাহায্যের জন্য আজ ই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন!
অনুবাদ: মোঃ তাসনিম হাসান আবির
এই ব্লগ টি English এ পড়ুন
2 Comments
খুব ভালো এবং উপকারী ।
ধন্যবাদ। আশা করি আপনি আমাদের আগামী ব্লগ গুলো উপভোগ করবেন।