বিদ্যমান স্বাস্থ্য সঙ্কটের প্রেক্ষিতে সামাজিক দূরত্ব এবং স্ব-বিচ্ছিন্নতা বা নিজ নিজ কোয়ারান্টাইন অপরিহার্য। তাই এই পহেলা বৈশাখে না আমরা কোন ধরনের মেলায় যেতে পারবো, না আমাদের বাসায় মেহমানদের আনাগোনা হবে (যা আমাদের পক্ষে অনুচিতও বটে)। তবে তার মানে এই নয় যে আমাদের এই বছরের নববর্ষ পালন থেকে বিরত থাকতে হবে। আমাদের এই প্যান্ডেমিক থেকে পরিত্রাণ পাবার জন্যে শুধু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারেই যে উৎসাহিত করা হয়েছে, তা নয়। এমতাবস্থায় পজিটিভ থাকার ব্যাপারটিও বেশ গুরুত্বপূর্ণ, এবং সেক্ষেত্রে বৈশাখের মতো একটি উৎসব পালন বেশ সহায়ক হতে পারে।
কোয়ারান্টাইনড থাকা অবস্থায়ও আমরা আমাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে পহেলা বৈশাখ পালন করতে পারি। কে বলেছে যে একটি উৎসবকে স্মরণীয় এবং আনন্দঘন করতে তাকে বেশ আয়োজন করেই পালন করতে হবে? তাই আজকে এই ব্লগে ঘরে বসেও কিভাবে আপনি বৈশাখ পালনের প্রস্তুতি নিতে পারেন সে ব্যাপারে আমরা কিছু টিপস শেয়ার করবো।
সফট ফার্নিশিং পরিষ্কার করা
আপনার ঘরের পরিবেশকে উৎফুল্ল করতে এবং বৈশাখের আমেজ আনতে ঘরের বেডশিট বদলে সতেজ এবং রঙিন কোন বেডশিট ব্যবহার করুন। শুধু বেডশিটই নয়, কাভার এবং ডুভে (duvet) গুলোও বেডশিটের সাথে সামঞ্জস্য রেখে পরিবর্তন করুন। গাঢ় রঙের বেডশিট হলে হালকা রঙের কাভার এবং ডুভে ব্যবহার করুন, এবং বেডশিটের রঙ হালকা হলে এর উল্টোটি করুন। যেহেতু গরমকাল চলেই এসছে, তাই হালকা রঙের পর্দা ব্যবহার করুন।
পহেলা বৈশাখের সজ্জা মানেই সবকিছুতে বাঙালিয়ানার ছোঁয়া, তাই আপনি বাসার সজ্জায় নকশী কাঁথা ডিজাইনের কুশন এবং জামদানী প্রিন্টের থ্রো বালিশ ব্যবহার করতে পারেন। আপনার লিভিং স্পেসের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে আপনি বাহারি রঙের কোন সতরঞ্জি বা পাটের রাগ ব্যবহার করতে পারেন। মনে রাখবেন, আপনার বাসায় হয়তো কোন অতিথির আগমন হবেনা, কিন্তু এই ধরনের গৃহ সজ্জা আপনার পরিবারের সদস্যদের একে অপরের সাথে আনন্দ সহকারে নতুন বর্ষ উদযাপন করতে সাহায্য করবে।
ফুলেল সজ্জা
আপনি কাঁচ বা সিরামিকের পাত্রে সতেজ ফুল সাজিয়ে রাখতে পারেন। অথবা সাজে নতুনত্ব আনতে আপনি পোড়ামাটির পাত্রও ব্যবহার করতে পারেন। সেক্ষেত্রে এটি আপনার লিভিংরুম কিংবা ডাইনিং স্পেসে সেন্টারপিস হিসেবে প্রদর্শন করুন, তাতে আপনার ঘরের সতেজতা আরও বৃদ্ধি পাবে। সজ্জায় গ্রীষ্মকালীন ফুল যেমন কৃষ্ণচূড়া, অপরাজিতা এবং পলাশ ব্যবহার করুন।
ফুলদানি বা পাত্রের কথার পরিপ্রেক্ষিতে, আপনার বাসায় সবাই মিলে আপনারা একসাথে কাদামাটির পাত্র রঙ করার মতো শৈল্পিক কাজ করতে পারেন। এই দুঃসময়ে আপনার পরিবারের সবার সাথে সবার বন্ধন দৃঢ় করার জন্যে এই ধরনের কার্যক্রম বেশ কার্যকরী হতে পারে, এবং তা বৈশাখ উপলক্ষ্যে আপনার গৃহ সজ্জায়ও সহায়ক হতে পারে।
গান
বৈশাখের চিরচারায়িত গান “এসো হে বৈশাখ, এসো এসো” ছাড়া কি বৈশাখ পালনের কথা চিন্তা করাও সম্ভব? তাই সে দিন গান বাজাতে ভুলবেন না। এবং আপনার বাসায় গ্রামোফোন থেকে থাকলে সেদিন এর উপরে আর কোন কিছু দিয়ে গান শোনার কথা ভাববারও প্রয়োজনীয়তা নেই।
এছাড়াও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আপনি একটি গানের কলি প্রতোযোগিতার আয়োজন করতে পারেন, বা সবাই মিলে রবীন্দ্র সংগীত উপভোগ করতে পারেন। দিনশেষে উৎসবটি আপনার, তাই আপনি যেভাবে ভালো মনে করবেন, সেভাবেই তা উদযাপন করুন।
টেবিল সেটআপ
দুপুরের কিংবা রাতের খাবার – যে সময়েই আপনি পান্তা, ইলিশ খাবার কথা ঠিক করেন না কেন, সে সময়ে আপনার টেবিল সাজাতে বাঙালিয়ানা জিনিসপত্র ব্যবহার করুন। মাটির তৈরি থালা বৈশাখে খাবার পরিবেশনের জন্যে সবচাইতে যথোপযুক্ত বাসন। তবে এবার আপনি ভিন্নধর্মী কিছু চাইলে কাঁসার বাটি ও থালা ব্যবহার করতে পারেন।
টেবিলে বাসন রাখার জন্যে তার নীচে পাটের টেবিলম্যাট ব্যবহার করতে পারেন। যেহেতু আমরা বাংলা নববর্ষ পালনের কথা বলছি, তাই সেদিন সবকিছুতেই বাঙালিয়ানা জিনিস এবং সজ্জার প্রয়োগই যথোপযুক্ত।
ভোজনের আয়োজন
বর্তমান সময়ে বাসায় প্রস্তুতকৃত খাবার গ্রহণই সবচাইতে নিরাপদ কারণ একমাত্র বাসায় প্রস্তুতকৃত খাবারেই সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব। তাই খাবারের ব্যাপারের আপনার সর্বোচ্চটা দিতে চেষ্টা করুন।
প্রধান খাবার থেকে শুরু করে, সতেজ পানীয় যেমন কাঁচা আম বা তরমুজের জুস – সবই ঘরে তৈরি করা সম্ভব। দিনটি জাঁকজমকপূর্ণ হিসেবে পালন করতে একেবারে দেশিয় খাবার রান্না করুন – সেক্ষেত্রে আপনি পান্তা, ইলিশ কিংবা খিচুড়ি; দু’টোর যে কোন একটি বেছে নিতে পারেন।
এবং যেহেতু কোয়ারান্টাইনের এই সময়ে আমাদের হাতে অফুরন্ত সময়, তাই আপনি চাইলে যে কোন পিঠাও বানাতে পারেন। এটি শুধু আপনার বৈশাখ উদযাপনে একটি সুস্বাদু সংযোজনই হবেনা, এতে চাইলে আপনার পরিবারের সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে একটি আনন্দদায়ক সময়ও কাটাতে পারবে।
তবে বৈশাখের আয়োজন শুরু করার আগে আপনার বাসার অপ্রয়োজনীয় জিনিস সরিয়ে বাসাকে পরিচ্ছন্ন ও জীবানুমুক্ত করা জরুরি। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বাড়িঘর পরিছন্ন রাখার টিপস জানতে এখানে ক্লিক করুন।
আমরা বিশ্বাস করি, আমরা সকলেই আমাদের চারপাশের পরিবেশ ও জনসাধারনের সুস্বাস্থ্যের লক্ষে নিজ নিজ জায়গা থেকে যথাসাধ্য চেষ্টা করছি এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করার। এমতাবস্থায় আমরা আশা করি আমাদের এই ব্লগটি আপনাকে এই পরিস্থিতিতে একটি ঘরোয়া তবে আনন্দময় বৈশাখ উদযাপনে সহায়তা করবে। আশা করি আপনি আপনার পরিবারের সকলের সাথে সুস্বাস্থ্যে এবং নিরাপদে একটি সুন্দর বর্ষবরণ উদযাপন করতে পারবেন!
এই ব্লগ টি English এ পড়ুন
অনুবাদ: নাজিয়া বিনতে শফিক
No Comments