ঘরে নিয়মিত ব্যবহারের কার্পেটটিও হতে পারে আপনার ইন্টেরিওরের একটি আর্টওয়ার্ক। কাঠ, কনক্রিট কিংবা টালি করা ফ্লোরে কার্পেট বা এরিয়া রাগ ব্যবহার আপনার স্পেসকে ফুটিয়ে তুলবে।
ঘরকে পছন্দ অনুযায়ী সাজাতে এমন কার্পেট দিয়ে শুরু করুন, যা আপনার ঘরের সাথে মানিয়ে যায়। ঘরের ইন্টেরিওরে একঘেয়েমি দূর করতে ব্যবহার করতে পারেন প্যাটার্নড বা নকশা করা কার্পেট। অথবা ঘরে ছিমছাম আবহ বজায় রাখতে ঘরের ইন্টেরিওর অনুযায়ী সিম্পল ধরনের কার্পেটও বেছে নিতে পারেন।
ঘরে ব্যবহার করা কার্পেটগুলো ঘরের সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিতে পারে বহুগুণে, কিন্তু সঠিক প্যাটার্ন কিংবা আকার বেছে নিতে ভুল হলে ঘটতে পারে বিপত্তি। কিন্তু এতে ভয়ের কিছু নেই! আজকে এই ব্লগে আমরা জানব, কার্পেটের বিভিন্ন ধরন এবং এর ব্যবহারের দারুণ কিছু টিপস।
১। সঠিক মাপের কার্পেট বেছে নেওয়া
সঠিক মাপের একটি কার্পেট পুরো ঘরের আভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিতে পারে। এক্ষেত্রে আপনি কার্পেটটি এমন ভাবে সেট করতে পারেন যেন ঘরের আসবাবপত্র কার্পেটের ওপরে থাকে অথবা আপনি সোফা কিংবা আসবাবাপত্রের ফ্রন্ট লেগ বা সামনের দু’পা কার্পেটে সেট করতে পারেন। এটি আপনার ঘরকে তুলনামূলক বড় দেখাতে সাহায্য করবে।
সাধারণত বেশিরভাগ রুমের ক্ষেত্রে কার্পেট এবং দেয়ালের মাঝে ১০ থেকে ২০ ইঞ্চি পরিমাণ খালি জায়গা রাখা হয়। এছাড়া আরেকটি বিষয় নিশ্চিত করতে হবে যে, কার্পেটটির চারপাশ দেয়ালের প্রান্তগুলোর সাথে সমান ভাবে সেট করা থাকে।
২। সলিড রঙের কার্পেট বনাম প্যাটার্ন কার্পেট
প্যাটার্ন বা নকশা করা কার্পেট ব্যবহারের ব্যাপারে সবাই আগ্রহী হয়না। আপনার ঘরে যদি ভারী নকশার আসবাব হয়ে থাকে তাহলে সলিড ডিজাইনের কার্পেট ব্যবহার করাই শ্রেয়। অপরদিকে, আপনার দেয়াল যদি সলিড বা একরঙা হয়ে থাকে তাহলে রুমে বৈচিত্র আনতে প্যাটার্নড বা নকশা করা কার্পেট ব্যবহার করতে পারেন।
৩। সঠিক ধরন বেছে নেওয়া
ঘরের অন্যান্য আসবাবপত্রের মতো কার্পেটরও বিভিন্ন ধরন রয়েছে। আপনার ঘরের জন্য হুট করে কার্পেট বেছে নেওয়ার আগে আপনার ঘরের আবহের সাথে যায়, এমন ধরনটি বাছাই করুন। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে, আপনার পুরো ঘরের আনুসাঙ্গিক এবং আসবাবপত্রের সাথে আপনার কার্পেটটিও সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।
অ্যাজটেক কার্পেটগুলো ঘরে একটি বোহেমিয়ান ভাব যোগ করে। ঘরের অন্দরসজ্জায় জন্য এগুলো অত্যন্ত দারুণ। এ ধরনের কার্পেটগুলো কালজয়ী কিছু নকশা এবং বিখ্যাত ডিজাইনের কারণে বিখ্যাত। হালকা ধরনের ফার্নিচারের সাথে এ কার্পেটগুলো খুব সুন্দর মানিয়ে যায় এবং সকলের নজর কাড়ে।
আপনি যদি সিম্পল বা ছিমছাম ভাবে ঘরকে ফুটিয়ে তুলতে চান, তাহলে হাল্কা ধূসর, বেইজ কিংবা সাদা রঙের মতো কিছু নিউট্রাল রঙ বেছে নিতে পারেন।
স্ক্যান্ডেনেভিয়ান স্টাইলের বাড়িগুলোর সাথে এ ধরনের কার্পেট খুব দারুণভাবে মানিয়ে যায়।
এছাড়া আপনার ফার্নিচার এবং কফি টেবিলকে আরও সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারেন একটি স্টাইলিশ কার্পেট দিয়েই। নিউট্রাল রঙের মাঝে জ্যামিতিক নকশা করা কার্পেট আপনার ঘরে এনে দিতে পারি একটি শান্তিপূর্ণ আবহের ছোঁয়া। ঘরের জন্য মানানসই একটি কার্পেট আপনার ঘরে এনে দেয় স্বাচ্ছন্দ্যম অনুভূতি। ছিমছাম উপায়ে গর্জিয়াস ভাবে ঘরের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলার জন্য এটি একটি দারুণ উপায়।
ভিক্টোরিয়ান ধাঁচের কার্পেটগুলো কিছুটা বোল্ড রঙের মাঝে অনেক নকশাপূর্ণ হয়ে থাকে। আধুনিক ভিক্টোরিয়ান ইন্টেরিওরে এ ধরনের নকশা ব্যবহার করা হয়।
৪। সঠিক শেপ বেছে নেওয়া
আমরা সাধারণত যে আয়তকার ধাঁচের কার্পেটগুলো ব্যবহার করে থাকি, এর থেকে বের হয়ে নতুন কিছু শেপ বেছে নিতে হবে। আপনার ঘরের শেপ এবং আসবাব অনুযায়ী সঠিক কোনটি হবে তা বুঝে কার্পেট নির্বাচন করতে হবে। হয়তো চারকোণা একটি কার্পেট আপনার ইন্টেরিওরকে কমপ্লিমেন্ট করবে দারুণভাবে অথবা গোলাকৃতি কিংবা অভাল শেপ এর কার্পেট মানিয়ে যাবে আপনার ইন্টেরিওরের সাথে।
বৃত্তাকার কার্পেট ঘরের পরিবেশে নতুনত্ব নিয়ে আসে। এটি ব্যবহারে ঘরের ছোট স্পেসকেও আরও বড় দেখায়। এটি ঘরে যেকোন জায়গায় ব্যবহারের চেয়ে ঘরের মাঝে রাখার জন্য বেশি উপযোগী। পাটের বৃত্তাকার কার্পেটগুলো ঘরে একটি আরামদায়ক কিংবা রিল্যাক্সিং পরিবেশ তৈরি করে।
আপনার ঘরের ইন্টেরিওরে নতুনত্ব নিয়ে আসতে পারে আপনার ডাইনিং টেবিল এর নিচে একটি অসম আকৃতির কার্পে্ট রাখার মাধ্যমেই। এর ব্যবহার খুব বেশি প্রচলিত না হলেও ইন্টেরিওরের জন্য এটি নতুন একটি ধারা। কার্পেট নির্বাচনের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু শেপ বা আকার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে এবং আপনার ঘরের ইন্টেরিওরের ধরন অনুযায়ী শেপ নির্ধারণ করতে হবে।
৫। আরামদায়ক কার্পেট বেছে নেওয়া
সারাদিনের ব্যস্ততা আর ক্লান্তির পর কখনো কি মনে হয়েছে নরম কিংবা ফ্লাফি কোন বসার জায়গার গা এলিয়ে দিতে? এক্ষেত্রে আপনার ঘরের কার্পেট একটি বড় ভুমিকা রাখতে পারে। এক্ষেত্রে আপনি বেছে নিতে পারেন কটন কিংবা উলের তৈরি তুলতুলে ধরনের পশমি কার্পেট, যা আপনাকে দিবে শান্তি। অত্যন্ত আরামদায়ক হওয়ার পাশপাশি এটি এগুলো অত্যন্ত বাজেট ফ্রেন্ডলি।
আরামদায়ক কার্পেটের কথা ভাবতেই নির্দ্বিধায় মাথায় আসে পশমি কার্পেটগুলোর কথাই। এগুলো খুবই আরামদায়ক এবং বর্তমানে ইন্টেরিওরের সাথে ভীষণ ট্রেন্ডি! আর এটির আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো এ কার্পেটগুলো ঘরে একটি বিলাসবহুল কিংবা লাক্সারি ইন্টেরিওর লুক পেতে সাহায্য করে।
কটন কার্পেট ঘরে ব্যবহারের জন্য সবচেয়ে আরামদায়ক। এগুলো খুব সহজেই ধোয়া যায়, এমনকি ওয়াশিং মেশিনেও এগুলো পরিষ্কার করা যায়। এ ধরনের কার্পেটগুলো আপনার বিছানার পাশে সেট করুন, যা আপনাকে দিবে স্বস্তি এবং ফ্লোরের সৌন্দর্যও বৃদ্ধি করবে।
৬। কার্পেটের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং যত্নআত্তি
কার্পেট নির্বাচনের আগে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন কার্পেটের ম্যাটেরিয়ালটি আপনার ফ্লোরের জন্য উপযোগী হয়। বেশীরভাগ কার্পেটই প্রতিনিয়ত ভ্যাকুয়াম করার প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে ভারি ধাচের কার্পেটগুলো হালকা ধাচের কার্পেট পরিষ্কার করার চেয়ে একটু বেশি কঠিন। এগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মাঝে মাঝে প্রফেশনাল কিংবা পেশাদারেরও প্রয়োজন হয়ে থাকে।
বাসায় যদি বাচ্চা থেকে থাকে, সেক্ষেত্রে সাদা কিংবা একরঙা কার্পেটগুলো তাদের জন্য অনুপযোগী। কেননা খবার কিংবা রঙে সহজেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে কার্পেটটি।
সরাসরি সূর্যের আলো পড়ে এমন জায়গা এড়িয়ে চলতে হবে। কেননা, এতে আপনার কার্পেটটির রঙ মলিন হয়ে যেতে পারে।
আশা করছি, এই ব্লগটি আপনার ঘরকে কার্পেট কিংবা এরিয়া রাগ দিয়ে সাজিয়ে তুলতে সাহায্য করবে। প্রফেশনাল ইন্টেরিওর ডিজাইনারদের সাহায্য পেতে অথবা অলনাইনে ডিজাইন পরামর্শ পেতে, আজই যোগাযোগ করুন, Sheraspace এ।
এই ব্লগ টি English এ পড়ুন ।
অনুবাদ: জান্নাতুল তাজরিয়া ফারসি
No Comments