আপনার বাড়ির পেইন্টিং এর জন্য সঠিক রং নির্বাচন করা একটি কঠিন কাজ বলে মনে হতে পারে। বিশেষ করে যখন অনলাইনে চোখের সামনেই ঘুরতে থাকে হালের সাথে তাল মিলিয়ে চলা নানান ধরনের ছবি। আপনি তখন ভাবতে পারেন আপনার বাড়ির জন্য কোনটি তবে সঠিক রঙ? এটি কীভাবে আপনার ঘরের প্রয়োজনীয়তার সাথে তাল মিলিয়ে আপনার অনন্য ব্যক্তিত্বকে প্রকাশ করে? আরো অগণিত নানান প্রশ্ন তো আছেই।
ঘরের জন্য উপযুক্ত রঙ বেছে নেয়ার পুরো প্রক্রিয়াটি নিয়ে আপনার চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই। অভিজ্ঞদের এই টিপসগুলো অনুসরণ করে আপনি বাছাই করতে পারেন এমন একটি কালার প্যালেট যা শুধু আপনার ঘরকেই সাজিয়ে তুলবে না, বরং আপানার ব্যক্তিত্বকেও ফুটিয়ে তুলবে।
১। ৬০-৩০-১০ এর নীতি
ঘরের রঙগুলোকে তিনটি অনুপাতে ভাগ করুন: সবচেয়ে প্রভাবশালী বা ডমিন্যান্ট রঙের জন্য ৬০%, সেকেন্ডারি বা গৌণ রঙের জন্য ৩০% এবং অ্যাকসেন্ট রঙের জন্য ১০%। ডমিন্যান্ট রঙের মধ্যে রয়েছে দেয়ালের পেইন্টিং, ক্যাবিনেট, বড় আসবাবপত্র ইত্যাদি, যা ঘরের সামগ্রিক টোনকে সেট করে থাকে। সেকেন্ডারি রঙের মধ্যে রয়েছে গৃহসজ্জার সামগ্রী, মেঝের কারপেট বা পর্দার রং, যা ডমিন্যান্ট রঙের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। ঘরের অ্যাকসেন্ট রঙের মধ্যে আছে বিভিন্ন শিল্পকর্ম বা আনুষাঙ্গিক সহ আর্টওয়ার্ক যা আপনার স্পেসে ফুটিয়ে তোলে আপনার আগ্রহ এবং ব্যক্তিত্বের প্রতিচ্ছবি।
আপনি যদি আপনার ঘরের জন্য রং বেছে নিতে চান তবে ডমিন্যান্ট কালার হিসাবে যেকোন রঙ বেছে নিতে পারেন এবং পর্দা ও অন্যান্য জিনিস যেমন টেবিল এবং চেয়ারের জন্য রঙ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সেকেন্ডারি রঙকে প্রাধান্য দিতে পারেন এবং তৃতীয় রঙ এর একটি অ্যাকসেন্ট দেয়াল যোগ করতে পারেন। তবে আপনি যদি আপনার ঘরের বিদ্যমান আসবাবপত্র দিয়েই রুম পেইন্টিং এর মাধ্যমে নতুনত্ব নিয়ে আসতে চান, তাহলে ঘরের ডমিন্যান্ট রঙটিকে মাথায় রেখে এরপর সেই রঙের সাথে মানানসই একটি রঙ বেছে নিন। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার ঘরে মেহগনি ক্যাবিনেট থাকে তবে আপনি আপনার দেয়ালে জলপাই, বেইজ বা সাদা রঙ করতে পারেন। আবার আপনার আসবাবপত্র যদি সাদা রঙের হয় তবে আপনি কমলা, মভ বা নীল দেয়াল বেছে নিতে পারেন।
২। লাইটিং নিয়ে ভাবছেন?
আপনার ঘরের রঙ নির্বাচনের প্রথম ধাপটি হলো আপনার প্রতিটি ঘরে প্রাকৃতিক এবং কৃত্রিম আলোর প্রাচুর্যতা সম্পর্কে যত্ন সহকারে ভেবে দেখা । এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কারণ আলো বা লাইটিং ঘরের রঙকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে।
কুল এবং ওয়ারম ওয়ারম টোনের ধারণাটি মনে রাখা খুবই জরুরী বিষয়। কুল টোন হলো নীল আন্ডারটোন যেমন নেভি, টিল, বেগুনি, ম্যাজেন্টা, চক সাদা, ধূসর, ফিরোজা ইত্যাদি। অন্যদিকে, ওয়া টোন হলো লাল আন্ডারটোনের রঙ, যেমন বাদামী, বেইজ, সবুজ, লাল, কমলা, জলপাই, কোরাল ইত্যাদি।
যেহেতু উত্তরমুখী ঘরগুলোতে অল্প সূর্যের আলো পাওয়া যায়, তাই এই ঘরগুলোতে যদি কুল টোনের রঙ পেইন্ট করা হয় তবে ঘর খানিকটা অন্ধকার এবং নিঃশ্চুপ দেখাবে। সেজন্য উত্তরমুখী বাসাগুলোতে কুল আন্ডারটোনের বদলে ওয়ারম টোন বেছে নেওয়া উচিত। বিপরীতভাবে, একটি দক্ষিণমুখী ঘরের জন্য কুল কালারগুলোকে বেছে নিন, যেখানে প্রচুর সূর্যালোক পাওয়া যায়, যাতে এটি সূর্যালোকের তীব্রতার ভারসাম্য বজায় রাখবে এবং ঘরে একটি শান্ত পরিবেশ তৈরি করতে সাহায্য করবে।
দিনের বিভিন্ন সময়ে আলোর সাথে রঙ কীভাবে পরিবর্তিত হয় তা দেখতে পেইন্ট চিপ দিয়ে পরীক্ষা করা খুবই জরুরি। শুধুমাত্র কাগজের সোয়াচের দিকে তাকাবেন না; বরং যে দেয়ালে রঙ প্রয়োগ করা হবে সেখানে খেয়াল রাখুন। ঘরের আকার এবং আনুসাংগিক উপাদান, যেমন মেঝে ও আসবাবপত্র রঙটিকে প্রভাবিত করে থাকে।
৩। সাদা দেয়াল নাকি রঙিন দেয়াল?
ইন্টেরিয়রে পেইন্টের রং নির্বাচন করার ক্ষেত্রে, সাদা এবং অন্যান্য শেডের সূক্ষ্মতা বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পিওর সাদা একটি ফাঁকা ক্যানভাসের মতো কাজ করে, যেটি আর্টওয়ার্ক বা সিলিং হাইলাইট করার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। উষ্ণ সাদা, হলুদ বা গোলাপী আন্ডারটোন যুক্ত রঙ, সল্প আলোযুক্ত স্থান বা বড় কক্ষগুলোতে আলো ঝলমলে ভাব নিয়ে আসতে সাহায্য করে। বিপরীতভাবে, কুল হোয়াইট, নীলাভ বা সবুজ রঙ একটি আবদ্ধ ঘরকে বড় দেখাতে সাহায্য করে।
আপনার ঘরের জন্য উপযুক্ত রঙটি খুঁজে পেতে বিভিন্ন ধরনের শেড নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে ভয় পাবেন না। আপনার পছন্দের রঙটি দিয়ে শুরু করুন, যেমন হতে পারে ঘরের একটি গালিচা বা মাদুর বা পেইন্টিং থেকে। যদি রঙটি খুব গাঢ় মনে হয়, তবে পেইন্ট স্টোরকে এর তীব্রতা সামঞ্জস্য করার জন্য এটির সাথে ধূসর রঙ মিশিয়ে নিতে বলুন। তবে এক জায়গাতেই একাধিক গাঢ রঙের ব্যবহার পরিহার করুন। এর পরিবর্তে রঙিন গালিচা বা বিভিন্ন শিল্পকর্ম হালকা রঙের দেয়ালের বিপরীতে উজ্জ্বল ভাবে ফুটে উঠে।
৪। কালার সাইকোলজি মনে রাখবেন
রঙ ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের মানসিক প্রভাব খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কুল টোনের নীল এবং সবুজ রঙগুলো আমাদের মনে শান্ত শীতল অনুভূতি নিয়ে আসে, যা সাধারণত বেডরুম এবং হোম অফিসের মতো ব্যক্তিগত স্পেসগুলোর জন্য আদর্শ। অন্যদিকে, উষ্ণ লাল, কমলা এবং হলুদ এক ধরনের প্রাণবন্ততা নিয়ে আসে, যা ঘরের জনসমাগম যুক্ত স্থান যেমন রান্নাঘর, বসার ঘর এবং খাবারের জায়গাগুলোর জন্য বিশেষভাবে প্রযোজ্য।
আপনি যদি ঘরে বিশ্রাম ও শান্তিপূর্ণ ঘুমের জন্য পরিবেশ তৈরি করতে চান তবে বেডরুমে হলুদ রঙ ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন। এর পরিবর্তে, শান্ত পরিবেশের জন্য হালকা নীল বা সবুজ রঙে দেয়ালকে প্রাধান্য দিন। আবার, উষ্ণ লাল ডাইনিং রুমের জন্য দুর্দান্ত হতে পারে কারণ এটি আমাদের ক্ষুধা বাড়াতে সাহায্য করে, তবে এটি হোম অফিসের জন্য সেরা পছন্দ নাও হতে পারে, কেননা সেখানে মনোযোগ বিচ্যুতির সম্ভাবনা বেশি থাকে। আপনি যদি কর্মক্ষেত্রে আপনার সৃজনশীলতা বাড়াতে চান তবে কমলা বা সবুজ রঙের শেডগুলি ব্যবহার করার কথা বিবেচনা করুন। আপনার বসার জায়গায় একটি ফরমাল লুক নিয়ে আসতে চাইলে চক হোয়াইট বা হালকা নীল রঙের ব্যবহার করতে পারেন এবং আপনার বসার ঘরের জন্য বেগুনি বা কমলা রঙের মতো গাঢ় রং বেছে নিন, এতে উৎফুল্ল পরিবেশের সৃস্টি হয়।
৫। রঙের সমন্বয় সাধন
আপনার স্পেসে খুব বেশি রং ব্যবহার করা উচিত নয়- তিন থেকে পাঁচটি প্রধান রঙকে প্রাধান্য দিন, যা একে অপরের সাথে সামঞ্জস্যতা বজায় রাখে। আপনাকে পেইন্টগুলোর রঙ হুবুহু মেলাতে হবে না কিন্তু সুন্দর একটি লুকের জন্য একে অন্যকে কমপ্লিমেন্ট করে এমন রঙ নির্বাচন করুন।
রুমগুলোর মধ্যে সুন্দর সমন্বয় রাখতে একই রঙের প্যালেটের মধ্যে কয়েকটি হালকা বা গাঢ় রঙ বেছে নেওয়ার কথা বিবেচনা করুন। সাদা, বেইজ বা ধূসরের মতো নিউট্রাল কিছু রঙ ব্যাকড্রপ হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন, যা ঘরের অন্যান্য শেডগুলোর সাথে দারুণভাবে ফুটে উঠবে।
আপনার বাড়ির অন্দরে একত্রতা ফুটিয়ে তুলতে অ্যাকসেন্ট আর্টওয়ার্ক, থ্রো পিলো বা কুশন ও অন্যান্য ঘর সাজানোর সামগ্রী ব্যবহার করে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে রঙ ব্যবহারের মাধ্যমে সুন্দর আবহ গড়ে তুলুন। রঙের এই পুনরাবৃত্তি আপনার বাড়িতে একত্রতা ফুটিয়ে তুলবে।
৬। সিলিং এর ব্যাপারে ভুলবেন না!
কম উচ্চতা বিশিষ্ট সিলিংকে উঁচু দেখানোর জন্য সাদা রঙ বেছে নিন। ক্রাউন মোল্ডের ব্যবহারের মাধ্যমে এটিকে উঁচু দেখানো যেতে পারে। দেওয়ালের রঙের চেয়ে হালকা যেকোন শেড ব্যবহার করলে সিলিংকে আরও প্রশস্ত মনে হয়। আবার বাথরুমের মতো ছোট রুমের জন্য সিলিং ও দেয়ালে একই রঙ ব্যবহার করলে রুমটিকে আরও বিস্তৃত মনে হতে পারে।
তবে, যদি আপনি ঘরে একটি আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করতে চান তাহলে সিলিং এর জন্য নীল বা কালো রঙের মত গাঢ় শেড বেছ নিন। মনে রাখবেন, যদি আপনার সিলিং যথেষ্ট উচ্চতাবিশিষ্ট হয়ে থাকে তবে এই টিপসটি সবচেয়ে ভাল কাজ করবে, অন্যথায় আপনার স্পেসটিকে ঘনবসতিপূর্ণ দেখাতে পারে।
কোন পেইন্টটি আপনার বাড়ির জন্য উপযুক্ত হবে সে সম্পর্কে এখনো অনিশ্চিত? Sheraspace আছে আপনাকে সাহায্য করার জন্য! আপনার ইন্টেরিয়র সম্পর্কে পেশাদার পরামর্শ পেতে, ক্লিক করুন Sheraspace- এ অথবা আজই আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন 01738174440 এই নম্বরে।
অনুবাদ: জান্নাতুল তাজরিয়া ফারসি
No Comments