অনেকের কাছে ঘরের ইন্টেরিওরে লাক্সারি প্রাধান্য পেয়ে থাকে। কিন্তু এতে অনেক সময় বাজেট একটি বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। তবে সহজ কিছু উপায়ে আপনি আপনার ঘরকে মনের মতো করে সাজিয়ে নিতে পারেন। আজকের এই ব্লগটিতে আমরা জানব, কীভাবে আপনি বাজেটের মাঝেই আপনার ঘরে আনতে পারেন আভিজাত্যের ছোঁয়া।
ঘরের সৌন্দর্যে মোল্ডের ব্যবহার
দেয়ালে মোল্ড বা ছাঁচ ব্যবহার ঘরকে ভিন্ন আঙ্গিকে সাজিয়ে তোলে। এটি আমাদের ঘরের দরজা, কর্নার এবং কার্নিশের একঘেয়ে ভাব দূর করে লাক্সারি লুক এনে দেয়।
বিভিন্ন ধরনের মোল্ডের ব্যবহার ঘরকে আরও রুচিশীল করে তুলতে পারে, তাও আবার বাজেটের মধ্যেই। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের রেডিমেড এবং প্রিন্টেড প্ল্যাস্টিক মোল্ড পাওয়া যায়, যার দাম সাধ্যের মাঝেই এবং এগুলো ইন্টেরিওরে ব্যবহারের জন্য খুবই দারুণ। রুচিশীল ধারা বজায় রাখতে ঘরের দেয়ালের রঙের সাথে মিলিয়ে মোল্ডের রঙ নির্ধারণ করুন। এটি ঘরের প্রতিটি অংশের মাঝে একটি সংযোগ স্থাপন করবে। এছাড়াও মোল্ডিং কিংবা প্যানেলিং এর মাধ্যমে আপনি একটি অ্যাকসেন্ট দেয়াল তৈরি করতে পারেন, যা ঘরের অন্যান্য দেয়াল থেকে কিছুটা ভিন্ন হবে এবং ঘরে নতুনত্ব নিয়ে আসবে।
রঙের ব্যবহারে ভিন্নতা
নির্দিষ্ট কিছু রঙ এবং টোন ঘরকে একটি বিলাসবহুল রূপ দিয়ে থাকে। রয়্যাল ব্লু, সেরুলিয়ান কিংবা কালো রঙের ব্যবহার ঘরে আভিজাত্যপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করে। আর দেয়ালের রঙের সাথে মিলিয়ে ঘরে অন্যান্য আনুষাঙ্গিকগুলোর ব্যবহার ঘরের সৌন্দর্যকে পরিপূর্ণ করে তুলবে। অন্যদিকে, ছোট জায়গা কিংবা স্বল্প পরিসরের জন্য হালকা রং ব্যবহার করা ভালো। হালকা টোনে আপনার ঘরের দেয়াল এবং ফ্লোরকে আরও বড় এবং উজ্জ্বল দেখাবে।
ঘরের জানালাকে সাজিয়ে তুলুন
ঘরে প্রবেশের পর সবার প্রথমে নজর কাড়ে ঘরের জানালাগুলো। জানালার পর্দা আপনার ঘরে এলিগেন্ট ভাব ধরে রাখতে খুবই বাজেট-ফ্রেন্ডলি একটি উপায়।পর্দা নির্বাচনে কটন, সিল্ক কিংবা লিনেন ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করুন, যা হালকা এবং ছিমছাম আবহ তৈরি করবে। আপনি এক্ষত্রে কিছুটা মিতব্যয়ী হতে পারেন এবং পর্দার কারুকাজের ওপর জোর না দিয়ে কাপড়ের ওপর জোর দিতে পারেন। আপনার বাজেটের মাঝেই আপনি ঘরের চাহিদা অনুযায়ী পর্দা নির্বাচন করুন। এমন কিছু পর্দা রয়েছে যা দিনের অতি সূর্যের আলোকে ঘরে প্রবেশে বাঁধা দেয় কিন্তু পর্যাপ্ত দিনের আলো যার মধ্যে দিয়ে সহজেই ঘরে প্রবেশ করতে পারে। এ পর্দাগুলো খুবই রুচিশীল এবং এদের দামও নাগালের মধ্যেই।
হুটহাট সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থাকুন
এই টিপসটি হচ্ছে, আপনার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে সচেতন থাকার বিষয়টি। কোনো একটি ফার্নিচার হয়তো আপনার ঘরে লাক্সারি লুক এনে দিতে পারবে, যা মোটেও বাজেট ফ্রেন্ডলি নয়। বরং এতে সেই একটি জিনিসের পেছনেই আপনার প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়ে যাবে। তাই জিনিস কেনার আগে আপনার আশেপাশের দোকানগুলোতে খেয়াল রাখুন। হয়তো ডিসকাউন্টেড প্রাইসেই আপনি পেয়ে যাবেন আপনার পছন্দের সেই পণ্যটি। এছাড়া অনলাইনেও আপনি পেয়ে যেতে পারেন আপনার কাঙ্ক্ষিত পণ্যটি।
কাঙ্ক্ষিত জিনিসটি পছন্দ হয়েই হুট করে দাম দিয়ে কেনার আগে অবশ্যই ভালোভাবে এর দাম যাচাই করতে হবে এবং তুলনামূলক সাশ্রয়ী কোন অপশন খুঁজে দেখতে হবে। এজন্য আপনাকে আগেই পণ্যটির উপযোগিতা অনুযায়ী একটি বাজেট সেট করতে হবে। বাজেটের মাঝে কাঙ্ক্ষিত পণ্য পাওয়া খুবই স্বস্তিদায়ক একটি ব্যাপার, আর বাজেটের থেকে কম দামে জিনিসটি কেনার মাধ্যমে আপনি প্রয়োজনীয় অন্যান্য জিনিসও কিনতে পারবেন সেই বাজেটের মাঝেই।
অতিরিক্ত জিনিস বর্জন করুন
চীনা ভাষায় একটি উক্তি আছে যে, অতিরিক্ত যেকোন কিছুই খারাপ, যেমনটি হলো রুমে অতিরিক্ত দামী আসবাব কিংবা আনুষাঙ্গিক জিনিস দিয়ে বোঝাই করে রাখা। তাই ঘরকে পরিষ্কার, নির্ঝঞ্ঝাট এবং শান্তিপূর্ণ আবহ বজায় রাখতে অতিরিক্ত সরঞ্জাম ছাটাই করুন।
প্রথমত, নিয়মিতভাবে ঘরকে পরিষ্কারপরিচ্ছন্ন রাখলে আপনার ঘরের রুচিশীলতা প্রকাশ পাবে।। দ্বিতীয়ত, ঘরের দাগ, কাপড়ের স্টেইন ইত্যাদি দূর করার মাধ্যমে ঘরের জরাজীর্ণ কিংবা পুরাতন ভাব চলে যায় এবং সুন্দর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে আপানার ঘরের আসবাবপত্র এবং জানালার দিকেও খেয়াল রাখুন। এগুলো পরিষ্কার করার মাধ্যমে ঘরে উজ্জ্বল এবং আলো ঝলমলে একটি আবহের সৃষ্টি হয়। বিলাসবহুল একটি ইন্টেরিওরের মূল চাবিকাঠি হলো এর রক্ষণাবেক্ষণ।
ভিন্ন আকারের আনুষাঙ্গিকের গুরুত্ব
ঘরে একটু ভিন্ন ধরনের লুক এনে দিতে বিভিন্ন শেপ বা আকারের আনুষাঙ্গিক ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন- বক্রাকার কিংবা বিভিন্ন আকৃতির ল্যাম্প বা বাতি, ওয়াল মিরর, কিংবা আপনার পছন্দের কোন আনুষাঙ্গিক। এগুলো ঘরকে আরও রুচিশীল করে তুলতে পারে। আপনি আপনার সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন দোকান কিংবা অনলাইন থেকে কিনে নিতে পারেন চাহিদা অনুযায়ী পণ্যটি।
আপনার ঘরের আনুষাঙ্গিক বলুক আপনার মনের কথা
আপনার ঘরে এমন একটি জিনিস যোগ করুন, যা সবচাইতে আলাদা। এটা হতে পারে তুলনামূলক দামী। কিন্তু আপনি আপনার আশেপাশের দোকান কিংবা বিখ্যাত পুরনো জিনিসের দোকান থেকে বিশেষ এই আনুষাঙ্গিক খুঁজে নিতে পারেন। অনেক সময় দেখা যায় পুরনো বা অ্যান্টিক জিনিসের বিভিন্ন অংশ বিক্রি করা হয়ে থাকে, যা আপনি ঠিক করে সহজেই দারুণ পিছ হিসেবে রূপান্তরিত করতে পারেন।
মৃদু আলোর ব্যবহার
ঘরের ইন্টেরিওরে ৩ ধরনের লাইট বা বাতির ব্যবহার হয়ে থাকে; অ্যামবিয়েন্ট লাইট, টাস্ক লাইট এবং অ্যাকসেন্ট বাতি। সাধারণত একটি রুমে দুটি বাতির প্রয়োজন হয়ে থাকে। ঘরে অতিরিক্ত বাতির ব্যবহার তৎক্ষণাৎ ঘরের আবহকে ফুটিয়ে তুলতে পারে। আপনার রুম এবং ঘরের ধরন বুঝে লাইট বাঝাই করুন। ঘরকে অভিজাত মন্ডিত করে তুলতে রুমে অ্যাকসেন্ট বাতির ব্যবহার করুন। শুনতে একটু হাস্যকর শোনালেও বলা হয়ে থাকে যে, এ ধরনের বাতির মাঝে সবাইকে বেশ সুন্দর লাগে। আপনার বাড়ির প্রতিটি বাতির ফিক্সচারের জন্য একটি ডিমার সুইচ যোগ করুন। এটি ব্যয়বহুলও নয় এবং সাধ্যের মাঝেই পাওয়া যায়।
প্রচলিত বিশ্বাসের বিপরীতে একটি কথা বলা যায় যে, বাড়ির ইন্টেরিওর ডিজাইনিং হতে পারে আপনার বাজেটের মধ্যেই। ছোট ছোট দিকগুলো যেমন- দেয়ালের রঙ, লাইট ইত্যাদি ঘরে এনে দিতে পারে অভিজাত এবং মার্জিত একটি পরিবেশ।
প্রফেশনাল ইন্টেরিওর ডিজাইন সহযোগীতা পেতে অথবা অনলাইনে ইন্টেরিওর ডিজাইনের পরামর্শের জন্য, আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন Sheraspace এ!
এই ব্লগ টি English এ পড়ুন ।
অনুবাদ: জান্নাতুল তাজরিয়া ফারসি
No Comments