কোভিড-১৯ সংক্রমণের পর থেকে আমাদের সকলের জন্যেই ঘরে থাকা অত্যন্ত জরুরি একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে এবং বিশ্বব্যাপী এই মহামারির সাথে লড়াই করতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে কোয়ারান্টাইনের কারণে এতো দীর্ঘ সময় বাসায় থাকা বেশ কঠিন হতে পারে। তাই এই দুঃসময়ে নিজ নিজ বাসায় শান্তি এবং আরাম খুঁজে নিতে পারাটা নিজেদের মানসিক স্বাস্থ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলার জন্যে অপরিহার্য!
কোয়ারান্টাইনের এই সময়কে অনেক ভাবেই কাজে লাগানো যেতে পারে, যা উৎপাদনশীল, বিনোদনমূলক বা উভয়েই হতে পারে। ঘরের পরিবেশে শান্তি ও নতুনত্ব আনতে আমরা ঘরের বাহ্যিক চেহারা পরিবর্তনের পাশাপাশি পরিচ্ছন্নতামূলক কাজও করতে পারি। আমরা এই ব্লগে কোয়ারান্টাইনের এই সময়ে আপনার ঘরে শান্তি খুঁজে পাবার ৬টি সহজ এবং সাধারণ কৌশল আলোচনা করবো।
অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরিয়ে ফেলা ও সবকিছু গোছানো
এই ধরনের কাজ করার জন্যে এতোদিন সময় বের করা আমাদের অনেকের পক্ষেই বেশ দুঃসাধ্য ছিল। তাই এই সময়ে আমরা যে কোন একটি জায়গা থেকে এই কাজগুলো শুরু করতে পারি।
শুরু করার জন্যে আলমারি বেশ ভালো জায়গা। কাপড়ের ধরন, আকার কিংবা রঙ – যে কোন একটি ধরেই আপনি আপনার আলমারি গোছাতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, স্যুট, ব্লেজার বা সালোয়ার গোত্রীয় কাপড় রাখতে হ্যাঙ্গারের ব্যবহার এবং আপনার টি-শার্ট বা টপগুলো ড্রয়ারে রাখতে পারেন। আবার প্রত্যেকটি ড্রয়ারে শুধু একই ধরনের কাপড় রাখতে পারেন, যেমনঃ একটি ড্রয়ারে শুধু টি-শার্টগুলোই রাখলেন যেন টি-শার্ট খুঁজতে গেলে শুধু সেই ড্রয়ারটি খুঁজলেই হয়। সুন্দরভাবে গোছানো একট আলমারির উপকারিতা অনেক। এটি সময় বাঁচায়, আপনি যা খুঁজছেন তা সহজেই খুঁজে পেতে সাহায্য করে এবং তা দেখতেও বেশ দৃষ্টিনন্দন লাগে।
আমাদের প্রত্যেকের ঘরেই কিছু জিনিস এলোমেলোভাবে বা যেখানে সেখানে পড়ে থাকে। সেক্ষেত্রে সেই সব জিনিসপত্র নির্দিষ্ট জায়গায় গুছিয়ে রাখা যেতে পারে। যেমন নানান কাজে ব্যবহৃত জিনিসগুলো স্টোররুমে, প্রয়োজনীয় বাসনপত্র বা খুঁটিনাটি রান্নাঘরে আর গ্লাস বা প্লাস্টিকের পাত্রগুলো স্ব স্ব কেবিনেটে গুছিয়ে রাখা যেতে পারে। অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আপনার বাসায় একটি অপরিচ্ছন্ন ভাব এনে দেয়। তাই আপনার কাবার্ড বা কেবিনেটে অপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলোকে ছাটাই করা, অব্যবহৃত জিনিসপত্র অপসারণ করা এমনকি টেলিভিশনের পেছনে বের হয়ে থাকা তারগুলো সঠিকভাবে পেঁচিয়ে রাখার এটিই সঠিক সময়।
একটি ওয়ার্কস্টেশন তৈরি করুন
প্রযুক্তি আমাদের বাসা থেকে কাজ করার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। আপনি একজন শিক্ষার্থী হয়ে থাকলে আপনি হয়তোবা এখন অনলাইন ক্লাস করছেন। আসলে এই পরিস্থিতিতে আমাদের মধ্যে অনেকেই নানাবিধ কাজের জন্যে বাসায় বসেই ল্যাপটপ ব্যবহার করছেন, বা কাগজপত্র নিয়ে হাতে-কলমে কাজ করছেন।
তাই যেহেতু আমাদের ঘরে বসেই দাপ্তরিক বা অন্যান্য নানা কাজে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে, সেক্ষেত্রে আপনার বাসায় অন্তত একটি ঘর কাজের পরিবেশ বান্ধব হওয়া প্রয়োজন। এটির জন্যে আপনি আপনার পড়ার টেবিলটি ব্যবহার করতে পারেন। আপনার পড়ার টেবিল থেকে অপ্রয়োজনীয় সবকিছু সরিয়ে আপনি আপনার ল্যাপটপ, স্টাডিল্যাম্প এবং সকালের চা-কফির জন্যে জায়গা তৈরি করতে পারেন। মনে রাখবেন, এক্ষেত্রে আপনার সেটআপটি আরামদায়ক হওয়া আবশ্যক। এমন চেয়ার বেছে নিন যাতে ভালোমতো হেলান দেয়া সম্ভব, আর এমন লাইট বেছে নিন যার মৃদু আলো আপনাকে কাজে মনোযোগ দিতে সহায়তা করবে। আপনার ওয়ার্কস্টেশনটিকে সাধারণ তবে কার্যকরী হিসেবে তৈরি করুন। ঘরে বসে আরামদায়কভাবে কাজ করার উপায় ব্লগটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
রঙ এবং টেক্সচার যোগ করুন
আপনার ঘরে সাবলীল কোন রঙ কিংবা টেক্সচারের ব্যবহার এই দুঃসময়ে আপনার ঘরে শান্তি বয়ে নিয়ে আসতে পারে। এই সময়ে বাইরে থেকে পেইন্টার ডেকে নিয়ে এসে ঘর রঙ করানোর বা নিয়ে বাইরে যেয়ে রঙের সামগ্রী কিনে নিয়ে এসে নিজে নিজে রঙ করা – কোনটিই সম্ভব নয়। তবে আপনি অন্যান্য পন্থাও অবলম্বন করতে পারেন।
ঘরে রঙ যোগ করার একটি অন্যতম উপায় হলো কুশন/ বালিশ। বালিশের অনেক রকম টেক্সচার সহজলভ্য। ফ্লোরাল, প্যাটার্নড কিংবা একরঙা বালিশও আপনার ঘরের সমস্ত মনোযোগ কেড়ে নিতে সক্ষম।
আপনার কাছে আর কোন পর্দার সেট থাকলে, বর্তমান পর্দার সেট পাল্টে আরেক সেট ব্যবহার করার এটিই সঠিক সময়। নতুন রঙের সংযোজন ঘরের পরিবেশে বৈচিত্র আনতে সহায়ক হবে। যেমনঃ গাঢ় শেডের কোন পর্দা বেডরুমে ব্যবহারের জন্যে বেশ উপযোগী, কারণ তাতে আপনার বিকেলের ঘুমটা বেশ আরামের হবে।
ঘরে রঙ সংযোজনের আরেক ধরনের উপায় হচ্ছে ফটোফ্রেম, পেইন্টিং বা শোপিস। সম্ভবত পুরনো ছবির এ্যালবাম থেকে ছবিগুলো বের করে ফটোফ্রেমগুলোকে কাজে লাগানোর এটাই সবচাইতে ভালো সময়।
ফার্নিচার পুনরায় সাজানো
এতো লম্বা সময় ধরে একই দিকে ফার্নিচারগুলো দেখতে দেখতে আপনার ভালো নাই লাগতে পারে। তাই আপনি ফার্নিচারের স্থান পরিবর্তন করে আপনার ঘরের চেহারায় নতুনত্ব আনতে পারেন। এতে আপনার ঘরে যে সতেজতা ও নতুনত্ব আসবে তা আপনাকে চমকে দিতে পারে! যতক্ষণ পর্যন্ত আপনার জায়গার সাথে ফার্নিচার সাজিয়ে রাখার সামঞ্জস্য থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এটি দেখতে ভালো লাগবে। তবে অতিরিক্ত কিছু করতে যাবেন না। যেমনঃ লিভিং রুমে আপনার সোফার স্থান পরিবর্তন করে টিভির উল্টোপাশে বসিয়ে ফেলবেন না।
আপনার বেডরুমেও আপনি একই কৌশল প্রয়োগ করতে পারেন। আপনার বিছানার স্থান পরিবর্তন করুন। এতোদিন উত্তরমুখী হয়ে ঘুমালেও নতুন করে দক্ষিণমুখী হয়ে ঘুমাতে আপনার ভালোও লাগতে পারে!
সবুজায়ন
আপনার ঘরে সবুজের ব্যবহার এই কোয়ারান্টাইনের সময়ে আপনাকে ব্যস্ত রাখতে সাহায্য করতে পারে। আপনার বাসায় গাছপালা আর ফুলেল সংযোজন ঘরের পরিবেশে নতুন জীবন দিতে পারে। তা ক্যাকটি, কাস্ট আয়রন প্ল্যান্ট বা এমনকি অ্যাস্পারাগাস ফার্ন যা-ই হোক না কেন – আপনার ঘরের শেলফে, কফি টেবিলে কিংবা লিভিং রুমের মেঝেতে তা স্থাপন করলে আপনার ঘরে একটি শান্তিময় পরিবেশ তৈরি হবে। এবং এর ফলে এই গাছগুলোকে সতেজ ও জীবন্ত রাখা আপনার দায়িত্বের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে, যা এই সময়ে আপনার মন সতেজ ও সুন্দর রাখতে সাহায্য করতে পারে।
আপনার ঘর ভালভাবে পরিষ্কার করুন
সর্বশেষে, কাজের উৎপাদন বাড়াতে আপনি আপনার ঘরের আদ্যোপান্ত পরিচ্ছন্ন করা শুরু করতে পারেন। অপরদিকে পরিষ্কার করা আপনাকে এক ধরনের কৃতিত্বেরও অনুভূতি দেবে। তাই আপনার ঘর পরিষ্কার করার কাজে নেমে পড়ুন।
আরো জরুরি ব্যাপার হচ্ছে, কোভিড-১৯ প্রতিরোধে পরিচ্ছন্নতা সবচেয়ে কার্যকরী উপায়। আপনার বাসা পরিচ্ছন্ন রেখে আপনি আপনার প্রয়োজনের উর্ধ্বেও একটি বড় কারণে সহায়তা করতে পারেন। প্রতিদিনের ব্যবহার্য জিনিসপত্র যেমন দরজার নব, ফোন, টেবিল্কলথ এসব প্রতিদিন জীবানুমুক্ত করুন। কোভিড-১৯ প্রতিরোধে বাড়িঘর পরিচ্ছন্ন রাখার উপায় ব্লগটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
যে জায়গাগুলো অন্য সময়ে পরিষ্কার করা বা গোছানোর সময় পান না, এই সময়ে সেই জায়গাগুলোর দিকে নজর দিন। আপনার ঘরের আনাচে কানাচে অনেক জায়গায়ই ধুলোবালি জমে থাকতে পারে যা পরিষ্কার করা প্রয়োজন।
আপনার রান্নাঘরের প্রতিও বিশেষ নজর দিন। প্রত্যেক বেলা খাবারের পর সব বাসনপত্র ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস ঠিকমতো পরিষ্কার হলো কি না তার তদারকি করুন। রান্নাঘরের কাউন্টার, ডাইনিং টেবিল এমনকি রেফ্রিজারেটরের মতো জিনিসগুলোও যেহেতু নিত্য ব্যবহার্য পণ্য, তাই এগুলোকেও জীবানুমুক্ত করুন এবং সতর্কতার সাথে ব্যবহার করুন।
আশা করি এই কৌশলগুলো আপনাকে বাসায় বসে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে সহায়তা করবে। অনুগ্রহ পূর্বক যে কোন কাজ করার পরেই পরিচ্ছন্নতা মেনে চলতে ভুলবেন না – ঘনঘন হাত ধুন ও জীবানুমুক্ত থাকুন। সুরক্ষিত থাকুন, বাসার ভেতরেই থাকুন এবং ঘরে বসে সময় উপভোগের চেষ্টা করুন!
এই ব্লগ টি English এ পড়ুন
অনুবাদ: নাজিয়া বিনতে শফিক
No Comments