রমজান আমাদের আপনজনদের সাথে বরকত ভাগাভাগি করে নেয়ার একটি বিশেষ সময়। রমজানের বরকত নিজেদের মাঝে ভাগ করে নেয়ার ব্যাপারে সুন্দরতম দৃষ্টান্ত হচ্ছে আপনজন এবং বন্ধুবান্ধবদের সাথে সেহরি বা ইফতার একসাথে করা – যা এই পবিত্র মাসের অন্যতম প্রধান বিষয়।
বর্তমানকালে ইফতারের সময়ে একসাথে ইফতার করার জনপ্রিয়তা তাৎপর্যপূর্ণভাবে বেড়েছে, এবং আপনি আমাদের দেশীয় পরিবারের অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকলে একসাথে ইফতার করার এই ব্যাপারটি আপনার জন্যে অবশ্যই অনেক প্রত্যাশার একটি ঐতিহ্য এবং সেক্ষেত্রে আসছে রমজানে আপনার বাসায় আপনি একাধিক না হলেও অন্তত একটি ইফতারের আয়োজন করার অনেক সম্ভাবনাই রয়েছে।
তাই আর দেরী না করে আমরা এখানে আপনার পরবর্তী ইফতারের জন্য কিছু অভিনব টেবিল সেটিং আইডিয়া উপস্থাপন করছি যাতে করে আপনার অতিথিদের কাছে শুধু আপনার পরিবেশনকৃত ইফতার দিয়েই নয়, খাবারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে টেবিল ঠিকভাবে রাখার ধরণেও আপনি আপনার অতিথিদের মুগ্ধ করতে পারেন – কারণ ইফতারের জন্যে দুটিই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
রঙের সমন্বয় বাছাই করুন
একসাথে ইফতার করার ক্ষেত্রে ইফতারের পরিবেশ সঠিকভাবে উপস্থাপন করার জন্যে রঙের সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। অফিসের সহকর্মীদের সাথে আনুষ্ঠানিক গেট টুগেদারই হোক কিংবা হোক কাছের বন্ধুবান্ধবদের সাথে আরামদায়ক পরিবেশে ঘরোয়া ইফতার – সঠিক রঙ ব্যবহারের উপরে বাসার পুরো সজ্জার সাথে সবার মানসিক মেলবন্ধন এমনকি রমজানের পবিত্রতাও প্রকাশ পায়।
আনুষ্ঠানিক ইফতারের জন্যে আপনি সোনালি রঙ বেছে নিতে পারেন, এতে করে আপনার অফিসের সহকর্মী, বাসায় আগত বিশেষ অতিথি এমনকি আপনার শ্বশুরবাড়ির মানুষজনকেও আপনি খুশি করতে পারবেন। সোনালি রঙের ব্যবহার আপনার সজ্জাকে শুধু আকর্ষণীয় করেই তুলবেনা, গোলাপি, লাল কিংবা নীল রঙের সাথে সোনালি রঙ্ এতো সুন্দর মানিয়ে যাবে যে আপনার বাসায় আগতরা মাসের পর মাস আপনার সজ্জার প্রশংসা করবেন।
অপরদিকে বন্ধুবান্ধব বা কাছের মানুষজনের সাথে খুব আরামদায়ক কোন ইফতার করতে চাইলে জ্বলজ্বলে সোনালির পরিবর্তে সেক্ষেত্রে আপনি উজ্জ্বল হলুদ বা হালকা ধরনের নীল রঙ ব্যবহার করতে পারেন। বাহিরের তাপ এবং আর্দ্রতার কথা মাথায় রেখে হালকা রঙের ব্যবহার স্বভাবতই আপনার বাসার ভেতরে একটি কোমল পরিবেশ তৈরি করবে। বিভিন্ন শেডের হলুদ, সবুজ, সাদা, নীল বা অন্য যে কোন হালকা রঙের ব্যবহার করতে ভুলবেন না। এতে করে আপনার ঘরে যে আরামদায়ক পরিবেশ সৃষ্টি হবে, তাতে আগত অতিথিরা স্বছন্দ্যে আপনার তৈরিকৃত ইফতার গ্রহণ করতে পারবেন। সুতরাং রমজানের আমেজ ধরে রাখবে এমন রঙ বাছাই করে এখন থেকেই সজ্জার প্রস্তুতি শুরু করুন।
আকর্ষণীয় সেন্টারপিস ব্যবহার করুন
রঙ পছন্দ করার পরে এবার আপনার টেবিল সেটিং কতটা আকর্ষণীয় করে তোলা যায় সেদিকে নজর দেয়া দরকার। একেবারে শুরুতেই নিজের সৃজনশীলতাকে কাজে লাগান এবং আকর্ষণীয় ও একেবারে অনন্য কোন সেন্টারপিস ব্যবহার করুন যাতে করে আপনি তাৎক্ষণিকভাবে আপনার অতিথিদের নজর কাড়তে পারেন। মনে রাখবেন, আপনার টেবিল সজ্জার পুরোটুকুই সৌন্দর্য বর্ধনের পাশাপাশি আপনার অতিথিদের মনোরঞ্জনের জন্যে!
রমজান মাসকে মাথায় রেখে আপনার রঙের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আপনি ওরিয়েন্টাল বা এ্যান্টিক ধরনের সেন্টারপিস ব্যবহার করতে পারেন। যেহেতু লণ্ঠন রমজানের সাথে নিবিড়ভাবে জড়িত, তাই সেন্টারপিস হিসেবে কোন লণ্ঠনের ব্যবহার রমজান মাসের আবহকে তুলে ধরার একটি চমৎকার উপায় হতে পারে। কারুকার্যপূর্ণ একটি লণ্ঠন শুধু রমজান মাসকেই উপস্থাপন করবেনা, লণ্ঠন হতে নির্গত আলো উৎসবের আমেজ ধরে রাখতে ও অতিথিদের আত্মিক মেলবন্ধনের মাধ্যমে ইফতারের জন্য একটি সুন্দর আবহ তৈরি করতে সাহায্য করবে।
এছাড়াও আপনি কারুকার্যখচিত কোন আকর্ষণীয় ফুলদানীতে ফুল রেখে তাকেও সেন্টারপিস হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। ফুল যে কোন সজ্জায় রঙের স্ফূরণ ঘটায় এবং মৌসুমি ফুলের গন্ধে আপনার বাসায় আগত অতিথিদের মধ্যেও এক ধরনের ফুরফুরে পরিবেশ তৈরি হবে। সেন্টারপিস হিসেবে আপনি বড় কোন সুগন্ধী মোমবাতিও ব্যবহার করতে পারবেন, যার ফলে হালকা আলো আর সুগন্ধের সমন্বয়ে আপনার বাসায় একটি চমৎকার পরিবেশ সৃষ্টি হবে। সেন্টারপিস হিসেবে আপনি যা-ই পছন্দ করেন না কেন, মনে রাখবেন তা যেন আপনার অনন্য সজ্জার প্রতি আকর্ষণকে সঠিকভাবে প্রতিনিধিত্ব করে।
সাজানোর মাধ্যমে অতিথিদের নজর কাড়ুন
অতিথিদের কাছে সঠিক ইম্প্রেশন তুলে ধরার জন্যে ইফতারে পরিবেশনকৃত খাবারের সাথে সাথে টেবিলের সজ্জাও অত্যন্ত জরুরী। তাই আপনার সবচাইতে সুন্দর টেবিলক্লথ ব্যবহার করতে এবং আপনার সবচাইতে আকর্ষণীয় কাটলারির সেট ব্যবহার করতে ভুলবেন না। টেবিলক্লথের ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিক যে কোন আয়োজনের জন্য সাদা সাধারণ টেবিলক্লথ সবচাইতে নিরাপদ। তবে অনানুষ্ঠানিক কোন আয়োজনে আপনি ভিন্নধর্মী যে কোন ধরনের টেবিলক্লথ দিয়ে পরীক্ষা নিরিক্ষা করতে পারেন।
আপনি সাধারণ টেবিলক্লথ ব্যবহার করলে আপনার টেবিল সেটিংকে আরো একটু আকর্ষণীয় করে তোলার আরেকটি উপায় হচ্ছে টেবিল রানার ব্যবহার করা। যে কোন উজ্জ্বল রঙা টেবিল রানার আপনার টেবিল সেটিং এ অনন্যতা আনবে এবং এতে করে আপনি যে টেবিল সাজানোতে বেশ ভালোরকম শ্রম দিয়েছেন, তাও আপনার অতিথিদের কাছে প্রকাশিত হবে। মনে রাখা জরুরী যে কাগজের ন্যাপকিনের পরিবর্তে কাপড়ের ন্যাপকিন ব্যবহার করা ভালো কারণ এটি ক্লাসিক এবং আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক যে কোন ধরনের আয়োজনেই এটি আপনার মনমতো পরিবেশ তৈরি করতে সাহায্য করবে।
সুন্দর ডিনার সেট ব্যবহার করুন
আপনার টেবিলকে সুন্দরভাবে সাজানোর পাশাপাশি একটি সুন্দর ডিনার সেট ব্যবহার করাও এক্ষেত্রে বেশ জরুরী। আপনার কাছে থাকা সবচাইতে সুন্দর ডিনার সেটটি ব্যবহার করুন, কিংবা নতুন কোন ডিনার সেট কিনতে পারেন কারণ শুধু ইফতার গেট টুগেদারেই নয়, এই ডিনার সেট ঈদের সময়ও আপনার জন্যে বেশ উপকারী হবে।
অনানুষ্ঠানিক কোন আয়োজনে আপনি রঙিন যে কোন ডিনার সেট ব্যবহার করতে পারেন। তবে আনুষ্ঠানিক আয়োজনের ক্ষেত্রে সাদা পোর্সেলিনের সাথে সোনালি বা রূপালি কাজ বেশি উপযোগি হবে। একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আপনার টেবিলের কাপড়ের সাথে টেবিলে রাখা সরঞ্জামাদির রঙের সামঞ্জস্যতা – এসব ক্ষেত্রে সাদা বাটি/ থালা মোটামুটি সব ধরনের অবস্থায়ই সামঞ্জস্যতা বজায় রাখতে পারে এবং ইফতারের জন্যেও বেশ উপযোগি। দিনশেষে আপনি যেভাবেই আপনার টেবিলকে সাজাতে চান না কেন, তার মাধ্যমে আপনার বাসায় আগত অতিথিদের আরাম ও স্বাছন্দ্য নিশ্চিত করাটাই সবচেয়ে বড় কথা, কারণ সবকিছুর আগে সেটিই সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ।
খাবার পরিবেশন
ইফতারের খাবার সাজানোর ক্ষেত্রে সবচাইতে প্রয়োজনীয় দিকটি হচ্ছে এমন ভাবে খাবার সাজানো যাতে আগত অতিথিরা প্রত্যেকেই নিজের প্রয়োজন নিজেই মেটাতে পারে, যেহেতু ইফতারের সময় আপনার বাসার কাজের দায়িত্বে থাকা মানুষ থেকে শুধু করে প্রত্যেকেই সারাদিন শেষে সঠিক সময়ে রোজা ভঙ্গ করার নিয়ত করে। সমতল থালার মধ্যে যে কোন আইটেমের পিরামিড তৈরি করলে স্বল্প জায়গায় অনেক খাবার আঁটানো সম্ভব।
অথবা প্রধান খাবারের ক্ষেত্রে ঢাকনাযুক্ত বড় কোন পাত্রে তা পরিবেশন করলে তা অনেক সময় গরম থাকবে, যাতে করে আপনি বারবার রান্নাঘরে দৌড়ে গিয়ে খাবার আনার অস্বস্তি থেকে নিজেকে মুক্তি দিতে পারবেন। যাই হোক, আপনি সাজানো টেবিলে আপনার খাবার পরিবেশন করতে চাইলে মনে রাখবেন সেখানে নিয়ম একটাই, টেবিলে সবরকম বিশৃঙ্খলা পরিহার করা। তাই অপ্রয়োজনীয় থালা, বাটি, চামচ ব্যবহার করে বা স্বল্প জায়গায় অনেক খাবার একসাথে রাখার চেষ্টা করতে যাবেন না। আপনার অতিথিদের স্বাছন্দ্য এখানে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ এবং তারা যাতে ভালো খেয়ে, মনে প্রশান্তি নিয়ে নিজ নিজ বাসায় ফিরতে পারে, সেটিই আপনার মূল লক্ষ্য।
একটি ইফতার গেট টুগেদার ভালো খাবারের সাথে সাথে আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের সাথে কাটানো ভালো সময়কে প্রতিফলন করে। তবে রমজানের সময়ে নিজ বাসায় এ ধরনের আয়োজন দুঃশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে, বিশেষত এমন একটি মাস যখন আমাদের অনেকেই আত্মশুদ্ধির দিকে বেশি মনোনিবেশ করে – সেখানে বাসার সাজসজ্জার দিকে মনোনিবেশ করলে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দিক থেকে মনোনিবেশ হারিয়ে ফেলা বা নিজের ওপর বেশি চাপ নিয়ে ফেলার মতো ঘটনা ঘটতে পারে।
তাই রমজানে ইফতারের জন্য যদি আপনি আপনার বাসায় এ ধরনের কোন আয়োজন করতে চান, আশা করি উপরে আলোচনা করা এক বা একাধিক কৌশল আপনার দুঃশ্চিন্তা কমাতে এবং আপনার ইফতারের আয়োজনের সাথে আপনার বাসার খাবার পরিবেশনের সজ্জায় মনমতো আবহ সৃষ্টি করতে সহায়তা করবে।
এই ব্লগটি ইংরেজিতে পড়ুন।
অনুবাদ: নাজিয়া বিনতে শফিক
No Comments